বীর প্রতীক আব্দুর রউফ মজুমদার
আব্দুর রউফ মজুমদার, বীর প্রতীক (১৯২৯-১৯৯৪) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালে ফেনী জেলার পরশুরাম থানার জঙ্গলগানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আনু মিয়া মজুমদার এবং মাতার নাম ফজিলাতুন নেছা।
আব্দুর রউফ মজুমদার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে ইপিআরএর সৈনিক হিসেবে তিনি ঢাকার পিলখানা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে নায়েব সুবেদার পদে কর্মরত ছিলেন। ২৮শে মার্চ পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। এদিন তিনি ইপিআরএর অন্য বিদ্রোহী সদস্যদের নিয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরােধ করার জন্য চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থান নেন এবং সকাল ৮টায় পাকবাহিনীর মুখােমুখি হন। দুই পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। তিনঘণ্টা ব্যাপী এ যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ইপিআর-এর চারজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। আব্দুর রউফ মজুমদার এবং আরেকজন আহত হন। অন্য যােদ্ধারা আহত আব্দুর রউফ মজুমদারকে ফেনী হাসপাতালে নিয়ে যান। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতে পাঠানাে হয়। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিনি আবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২ নং সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরের বিলােনিয়া, মুন্সিরহাট, ফুলগাজীসহ বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি অনেক যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর সাহসিকতা ও যুদ্ধকৌশলের কারণে শত্রুপক্ষের অনেকে হতাহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আব্দুর রউফ মজুমদারকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৩৫, খেতাবের সনদ নং ১৮৫)। যুদ্ধের পর তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগ দেন এবং ১৯৭৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন কন্যা ও চার পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম সামছুন নাহার। এই বীর মুক্তিযােদ্ধা ১৯৯৪ সালের ৫ই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড