You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আব্দুর রকিব মিয়া

আব্দুর রকিব মিয়া, বীর বিক্রম (১৯৪৭-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার শােলাপ্রতিমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাতেম আলী মুন্সী এবং মাতার নাম হালিমুন নেসা। তিনি বােয়ালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশােনা করেন এবং বাশাইল গােবিন্দ হাইস্কুল (বর্তমান নাম সরকারি বাশাইল গােবিন্দ পাইলট হাইস্কুল) থেকে ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি করটিয়া শাহদাত কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু কলেজের অধ্যয়ন শেষ না করেই তিনি ১৯৬৫ সালের ২রা জুলাই পাকিস্তান নৌবাহিনীতে ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক পদে যােগ দেন। করাচিতে তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যুদ্ধ সরঞ্জাম আনার জন্য তাঁকে ইন্দোনেশিয়া পাঠানাে হয়। যুদ্ধের পর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ইরান যান। ইরানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সাবমেরিন সংক্রান্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ নিতে তাঁকে ফ্রান্সে পাঠানাে হয়। সেখানে অবস্থানকালে তিনি জাহাজের বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার খবর পান। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটি থেকে ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ পালিয়ে স্পেনের মাদ্রিদে যান। সেখান থেকে তিনি ভারতে আসেন। তাঁর সঙ্গে আরাে কয়েকজন সাবমেরিনার মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর সাহায্যে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের একটি নৌকমান্ডাে বাহিনী গঠন করা হয়। আব্দুর রকিব মিয়া ভারতের পলাশীতে এ বাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ঘাট থেকে পাকবাহিনী জাহাজে করে তাদের অস্ত্র, গােলাবারুদ ও খাদ্য বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাঠাত। মুক্তিযােদ্ধারা অক্টোবর মাসে পাকবাহিনীর সরবরাহ লাইন বাধাগ্রস্ত করার জন্য ফুলছড়ি ঘাটে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ অপারেশনের নেতৃত্ব দেয়া হয় আব্দুর রকিব মিয়ার ওপর। ২৫শে অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধা ও গাইড কালাচাঁদের সহায়তায় আব্দুর রকিব মিয়া তার অধীনস্থ ১২ জন নৌকমান্ডাে নিয়ে অপারেশন শুরু করেন। তাঁরা ফুলছড়ি ঘাটের অপর প্রান্তে যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে গভীর রাতে যমুনা নদীতে নামেন। তাঁদের প্রত্যেকের বুকে তখন লিমপেট মাইন বাঁধা ছিল। তীব্র স্রোতের মধ্যে ৫ মাইল প্রশস্ত যমুনা নদী সাঁতরে অতিক্রম করে তারা ফুলছড়ি ঘাটে পৌছেন। কিন্তু মাইন স্থাপন করার জন্য জাহাজের কাছাকাছি যাওয়ার পর জাহাজ ছেড়ে দিলে প্রপেলারের পাখার আঘাতে কয়েকজন নৌকমান্ডাে নদীতে তলিয়ে যান। দুঃসাহসী আব্দুর রকিব মিয়া চলন্ত জাহাজে মাইন স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ সাঁতারে থাকার ফলে ক্লান্ত আব্দুর রকিব মিয়া জাহাজের প্রপেলারের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁর দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি শহীদ হন। তাঁর মরদেহ প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে যায়। আরাে ২ জন কমান্ডাে শহীদ হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও জীবন উৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আব্দুর রকিব মিয়াকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ২০৯, খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৪)।
আব্দুর রকিব মিয়া অত্যন্ত সাহসী প্রকৃতির ছিলেন। তিনি অবিবাহিত অবস্থায় শহীদ হন। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে সখিপুর উপজেলা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রতিমা বঙ্কি গ্রামে নির্মিত সরকারি আবাসিক প্রকল্প/গুচ্ছ গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে। শহীদ বীর বিক্রম রকিব নগর। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!