বীর প্রতীক আব্দুর রহমান
আব্দুর রহমান, বীর প্রতীক (মৃত্যু ১৯৮৯) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আজিম উদ্দিন হাওলাদার এবং মাতার নাম জম্বিলা। তিনি স্থানীয় চৌঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) বাহিনীতে যােগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে তিনি হাবিলদার হিসেবে যশাের উইং হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। তিনি যশাের জেলার বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। এক পর্যায়ে পিছু হটে অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে তিনি ভারতীয় সীমান্তে অবস্থান নেন। পরে পুনর্গঠিত হয়ে মেজর নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বয়রা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া তিনি চৌগাছা, হাজীপুর, সাদীপুর প্রভৃতি যুদ্ধে অংশ নেন। যশাের জেলার চৌগাছা থানার হিজলী বিওপিতে পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ৩রা নভেম্বর পাকবাহিনী টহলরত মুক্তিযােদ্ধাদের একটি প্লাটুনকে ঘিরে ফেলে। এ খবর পেয়ে আব্দুর রহমান একদল মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে পাকবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন। এর ফলে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। আব্দুর রহমান আক্রান্ত মুক্তিযােদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৫৫, খেতাবের সনদ নং ২০৫)।
মুক্তিযুদ্ধের পর আব্দুর রহমান বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগদান করেন। ১৯৭৯ সালে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার কড়িয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৮৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। ব্যক্তিজীবনে তিনি চার কন্যা ও চার পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মাছুরা বেগম (প্রয়াত)। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড