You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আব্দুর রহমান

আব্দুর রহমান, বীর বিক্রম (১৯৩৭-২০১৮) হাবিলদার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। ১৯৩৭ সালের ১২ই মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বড়ধলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ আব্দুর রহিম এবং মাতার নাম শাহফুল বানু। ৬ ভাই ও ২ বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছােট। জগদীশপুর জে সি হাইস্কুলে পড়াশুনা অবস্থায় ১৯৫৮ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। হাবিলদার আব্দুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যশাের সেনানিবাসে ১ম ইস্ট বেঙ্গলে নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নির্মম গণহত্যায় লিপ্ত হয়। অপরদিকে সেনানিবাসসমূহে তারা বাঙালি সৈনিকদের ওপরও আক্রমণ চালায়। যশােরে ২৫শে মার্চ গণহত্যার পূর্বে বাঙালি সেনাসদস্যদের সেনানিবাস থেকে বাইরে নিয়ে ফিল্ড ট্রেনিংয়ে ব্যস্ত রাখা হয় এবং ট্রেনিং শেষে সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনে নিরস্ত্র করা হয়। এরপর সেনানিবাসের ভেতরেই নিরস্ত্র বাঙালি সেনাদের ওপর চলে সশস্ত্র আক্রমণ। এ আক্রমণে অনেক বাঙালি সেনা নিহত ও আহত হন। তাঁরা জীবন রক্ষার্থে কোঁত ভেঙ্গে অস্ত্র বের করে প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের প্রতিরােধ বেশি সময় টিকে থাকতে পারেনি। আব্দুর রহমান কোনাে রকমে সেনানিবাসের বাইরে আসতে সক্ষম হন। অতঃপর একটানা ১৫ দিন হেঁটে তিনি
তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। ৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর অধীনে এবং সাবসেক্টর কমান্ডার নাসিমের নেতৃত্বে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আব্দুর রহমান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে মাধবপুর, তেলিয়াপাড়া, আখাউড়া, নয়াপাড়া, জগদীশপুর, চৌমুহনী ইত্যাদি স্থানে লড়াই করেন।
মাধবপুর ও তেলিয়াপাড়ার যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার প্রমাণ দেন। ১১শ ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি যুদ্ধ করেন। তিনি ক্যাপ্টেন মতিনের নেতৃত্বেও একাধিক অপারেশনে অংশ নেন। ৩ নম্বর সেক্টরে বিভিন্ন এম্বুশে তিনি অংশ নেন। ৩০শে নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত আখাউড়াতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ হয়। এতে মেজর সফিউল্লাহ তাঁর ২য় এবং ১১শ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও সেক্টর ট্রপস-এর দুটি কোম্পানিকে নিয়ােগ করেন। কমান্ডার নাসিমের নেতৃত্বে ৩০শে নভেম্বর মুকুন্দপুরসহ অন্যান্য এলাকা মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং প্রতিরক্ষানূহ্য গড়ে ওঠে। ৫ই ডিসেম্বর আখাউড়া মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এর পূর্বে এখানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ হয়। আব্দুর রহমান সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মােকাবিলা করেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনী, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক দিয়ে আখাউড়া অবরােধ করে। অবশেষে ৫ই ডিসেম্বর আখাউড়ার পতন ঘটে। এছাড়াও তেলিয়াপাড়া, মনভলা ও জগদীশপুরের যুদ্ধে হাবিলদার আব্দুর রহমান বীরােচিত ভূমিকা পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে হাবিলদার আব্দুর রহমানের অসাধারণ সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম ছামছুন্নাহার। এ দম্পতি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!