বীর প্রতীক আবুল হাকিম
আবুল হাকিম, বীর প্রতীক (১৯৩২-১৯৯৪) একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলার মােহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফজলুর রহমান এবং মাতার নাম অযুফা বেগম।
আব্দুল হাকিম ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে সফল প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর পদাতিক বাহিনীতে পদায়ন লাভ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে পরিবহন শাখায় এমটি হাবিলদার পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। সে অবস্থায় তিনি বাঙালিদের ওপর পাকবাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ৩০ জনের অধিক বাঙালি সৈনিকসহ কৌশলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে গাজীপুর যান। এরপর ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ও পরবর্তীতে ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম সফিউল্লাহর সঙ্গে যােগ দিয়ে এ এলাকার বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
জুন মাসে সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে আব্দুল হাকিম ৩ নম্বর সেক্টরে গাজীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, নরসিংদী, বেলাবাে প্রভৃতি এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ২২শে অক্টোবর রাতে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা কালিয়াকৈর পুরাতন থানা কমপ্লেক্সে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং মাঝরাত ধরে তা চলে। পাকসেনা ও রাজাকারসহ মােট ১২ জন এ-যুদ্ধে নিহত হয়। যুদ্ধে আব্দুল হাকিম আহত হন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা পুনরায় পাকবাহিনীর এ অবস্থানের ওপর আক্রমণ করেন। ৫ ঘণ্টাব্যাপী তীব্র যুদ্ধ শেষে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুল হাকিমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ৫ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জোবেদা খাতুন। ১৯৯৪ সালের ২৮শে মে মুক্তিযােদ্ধা আবদুল হাকিম মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড