বীর প্রতীক আবুল বাসার
আবুল বাসার, বীর প্রতীক (১৯২৮-১৯৭১) একজন অকুতােভয় সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযােদ্ধা। ১৯২৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত রাউজান উপজেলার নােয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সৈয়দ হােসেন এবং মাতা সাজেদা খাতুন।
মােহাম্মদ আবুল বাসার ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দিয়ে চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে সুবেদার পদমর্যাদায় তিনি ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে বাঙালি সৈন্যদের বিদ্রোহে আবুল বাসার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ২৮শে মার্চ সন্ধ্যায় অবাঙালি সৈনিকদের হত্যা করে তিনি জয়দেবপুরের রাজবাড়ি ত্যাগ করে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে তিনি ভৈরব এলাকায় বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে তৎকালীন নরসিংদী মহকুমার রায়পুরা থানার বেলাবােতে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। দৃঢ় মনােবল আর নিপুণ সাংগঠনিক দক্ষতায় সকলকে একতাবদ্ধ করে আবুল বাসার একের পর এক গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকেন। তাঁর বাহিনীর কাছে পর্যদস্ত হয়ে পাকবাহিনী রাজধানীর নিকটবর্তী এ ঘাঁটিটি ধ্বংসের জন্য বারবার ব্যর্থ আক্রমণ পরিচালনা করে।
লঞ্চযােগে পাকবাহিনীর বেলাবাে আগমণের সংবাদ জানতে পেরে আবুল বাসার ১৪ই জুলাই বেলাবাের নিকটবর্তী টোক নামক স্থানে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এদেশীয় দোসরদের মাধ্যমে পাকবাহিনী এ সংবাদ জেনে যায়। তারা লঞ্চ থেকে নেমে খালি লঞ্চ ট্রাপ হিসেবে সামনে পাঠিয়ে দেয়। মুক্তিযােদ্ধারা যখন খালি লঞ্চের ওপর প্রচণ্ড গুলি বর্ষণ শুরু করে তখন পাকবাহিনী পেছন থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর ফাঁদে আটকা পড়া এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সুবেদার বাসার পশ্চাদপসরণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বীর বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকেন। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য এ-যুদ্ধে নিহত হয়। অপরদিকে, সুবেদার বাসারসহ ৭ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা ও জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে বীর প্রতীক’ খেতাবে। ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী হােসনে আরা বেগম। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড