বীর প্রতীক আবুল হাসেম
আবুল হাসেম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৩০) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালের ৫ই অক্টোবর নােয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের বাটইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী আবদুল কাদের, মাতার নাম সাহারা খাতুন। আবুল হাসেম ১৯৫১ সালে পুলিশ বিভাগে যােগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ইপিআর বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। হাবিলদার পদে পদোন্নতি লাভ করে ১৯৭১ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর দিনাজপুর হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে ঠাকুরগাঁও উইংয়ে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবুল হাসেম সহকর্মীদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার এম কে বাসারের নেতৃত্বে ভজনপুর সাব-সেক্টরের অধীনে বিরল, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বেলকুচপাড়া এবং পঞ্চগড়ের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামসমূহে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। জুন মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী এসব গ্রামে আক্রমণ করলে আবুল হাসেম ও তার সহযােদ্ধারা প্রতিরােধের চেষ্টা করেন। ২৮শে জুলাই তিনি সহযােদ্ধাদের নিয়ে চাত্তই নদীর তীরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গােলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর হানাদার বাহিনী একত্রিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে পাল্টা আক্রমণ করলে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন। এর কয়েকদিন পর নায়েব সুবেদার হাফিজের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা চিত্তই নদীর পূর্বপাড়ের পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আবুল হাসেম সাহসী ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আবুল হাসেমকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে আবুল হাসেম বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগদান করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি বিডিআর থেকে উইং হাবিলদার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম সাহারা খাতুন। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড