মুক্তিযােদ্ধা দল আবু সৈয়দ গ্রুপ
আবু সৈয়দ গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা আবু সৈয়দ (পিতা আবদুল মজিদ, হাইদগাঁও, পটিয়া)-এর নামে পরিচিত একটি মুক্তিযােদ্ধা দল। এ দলের প্রায় সকল সদস্য চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সন্তান। আবু সৈয়দ গ্রুপ চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবু সৈয়দ গ্রুপের মুক্তিযােদ্ধারা ভারতের বগাফা ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুদ্ধের শেষদিকে ১নং সেক্টরের হরিণা ক্যাম্প থেকে এ গ্রুপ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ গ্রুপের মুক্তিযােদ্ধাদের টার্গেট ছিল পটিয়া এলাকায় এসে পাকিস্তানি বাহিনী, তাদের দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে হানাদারমুক্ত করা। বাংলাদেশে প্রবেশ করে পটিয়ায় আসার পথে তারা অনেক অপারেশন ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানিকছড়িতে তাঁদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে গ্রুপের ৩ জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। আহত মুক্তিযােদ্ধারা হলেন- আশেন্দু বিকাশ দস্তিদার, আনােয়ারুল আজিম ও মৃদুল কান্তি সরদার। যােগ্যাছােলা বাজারে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক তারা আক্রান্ত হলে শক্ত প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। এছাড়া চাগাচর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন ও পটিয়া বাসস্টেশন সম্মুখ যুদ্ধে এ গ্রুপের মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। চাগাচর অপারেশন থেকে তাঁরা ৩৭টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পটিয়া বাসস্টেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের প্রায় এক ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। আবু সৈয়দ গ্রুপের মুক্তিযােদ্ধারা হলেন- কমান্ডার আবু সৈয়দ, সুধাংশু বিমল চৌধুরী (পিতা নিশিচন্দ্র চৌধুরী, হাইদগাঁও, পটিয়া), খায়ের আহমদ (পিতা দেলা মিয়া, হাইদগাঁও), দুলাল ঘােষ (পিতা সত্যরঞ্জন ঘােষ, ডেঙ্গাপাড়া, দক্ষিণ ভূর্ষি, পটিয়া), মাে. আলী, পিতা সৈয়দ আহমদ, নন্দেরখীল, ধলঘাট, পটিয়া), আনােয়ারুল আজিম (পিতা আলী আহমদ, নন্দেরখীল, ধলঘাট), মৃদুল কান্তি সরদার (পিতা খিরেন্দ্রলাল সরদার, ডেঙ্গাপাড়া), মাে. আবদুস সালাম (পিতা আবদুল কাদের, ঈশ্বরখাইন, ধলঘাট), শামসুল আলম (পিতা আবদুর রশিদ, আলমদার পাড়া, ছনহরা, পটিয়া), সুনত্ত বড়ুয়া (পিতা খগেন্দ্রলাল বড়ুয়া, উত্তর ভূর্ষি, কেলিশহর, পটিয়া), আবু সিদ্দিক (পিতা মাে. আহমেদুর রহমান, হাইদগাঁও), অমূল্য দাশ, হাইদগাঁও), রণধীর দাশ (পিতা মােহনবাঁশি দাশ, হাইদগাঁও), আশেন্দু বিকাশ দস্তিদার (পিতা অখিল দস্তিদার, হাইদগাঁও), নূর মােহাম্মদ, পিতা সিদ্দিক আহমদ, হাইদগাঁও), শামসুল আলম (পিতা রাহাত আলী, হাইদগাঁও), মাে. ইবরাহিম (পিতা আবদুল করিম, ধাওরডেঙ্গা, ছনহরা), আবদুল খালেক সওদাগর, খরনা, পটিয়া), মাহমুদুল হক (পিতা অলি মিঞা, টাকখাইয়ার বাড়ি, গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম), রতন ধর (বাইন্যাপাড়া, দক্ষিণ গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), আবদুস সবুর (চন্দনাইশ), রঞ্জিত কুমার সেন (পিতা রামাচরণ সেন, দক্ষিণ ভূর্ষি, পটিয়া), ডা. মিলন কান্তি সেন, দক্ষিণ ভূর্ষি, পটিয়া) ও আবদুর রহিম (পিতা আবদুল হাকিম, আজিমপুর, কচুয়াই, পটিয়া)। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড