সুবেদার ও মুক্তিযােদ্ধা বীর প্রতীক আবুল কালাম
আবুল কালাম, বীর প্রতীক (১৯৩৫-২০০৩) সুবেদার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩৫ সালের ১লা জানুয়ারি নােয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার লতিফপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আফজাল হােসেন এবং মাতার নাম সালেহা খাতুন। ৩ ভাই ও ১ বােনের মধ্যে আবুল কালাম ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি বেগমগঞ্জের দুর্গাপুর হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
আবুল কালাম ১৯৫৫ সালের ৪ঠা। এপ্রিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এ যােগদান করেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে তিনি দিনাজপুর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়াটার্স (কুঠিবাড়ি)-এ কর্মরত ছিলেন। ২৮শে মার্চ পাকবাহিনী ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স আক্রমণ করলে তিনি হাবিলদার ভুলু মিয়ার নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৩ই এপ্রিল পর্যন্ত তাঁরা দিনাজপুর শহর শত্রুমুক্ত রাখতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে পাকবাহিনী দিনাজপুর শহর দখলে নিলে তারা সীমান্তের ডালিমগাঁও নামক স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে খণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। জুন মাসে তিনি তাঁর সহযােদ্ধাদের সঙ্গে তেলঢালায় চলে যান এবং ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন। তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিলের অধীনে হেডকোয়াটার্স কোম্পানির নিয়মিত বাহিনীর মর্টার প্লাটুনের একজন কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। আবুল কালাম ১৫ই আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার গাজীরচর যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখেন। এছাড়াও তিনি জামালপুর জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ বিওপি, বাহাদুরাবাদঘাট, দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার ছাতক, গােয়াইনঘাট, ছােটখেল, রাধানগর, সালুটিকর, গােবিন্দগঞ্জ, লামাকাজীসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর মােকাবেলা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুবেদার আবুল কালামকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৭৯ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ১৬ই অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৬ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাকিয়া খাতুন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড