You dont have javascript enabled! Please enable it! সুবেদর ও মুক্তিযােদ্ধা বীর বিক্রম আবুল কালাম আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সুবেদর ও মুক্তিযােদ্ধা বীর বিক্রম আবুল কালাম আজাদ

আবুল কালাম আজাদ, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৪০) সুবেদর ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। ১৯৪০ সালে নােয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার সাতড়াপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম মাে. আবদুল গণি এবং মাতার নাম মাহমুদা খাতুন।
১৯৭১ সালে আবুল কালাম আজাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। পাকসেনাদের অস্বাভাবিক তৎপরতা পূর্বাহেই তাঁর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। এরপর অল্প কিছু সেনাসদস্যকে সঙ্গে দিয়ে মেজর খালেদ মােশাররফ, বীর উত্তম-কে বিনা কারণে সিলেটের শমশেরনগরে প্রেরণ করা হয়। এতে তার সন্দেহ আরাে ঘনীভূত হয়। ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ-র নিরঙ্কুশ বিজয়, পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি সেনানিবাস ছেড়ে খালেদ মােশাররফের নেতৃত্বাধীন ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে যােগ দেন। এ সেক্টরের বহু স্থানে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর মুখােমুখি হন এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ৬ই নভেম্বর ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর খালেদ মােশাররফ সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামকে নির্দেশ দেন বেলােনিয়া রেলস্টেশন থেকে ফেনী পর্যন্ত শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করতে। জাফর ইমাম দশম বেঙ্গল এবং লে. মােরশেদ দ্বিতীয় বেঙ্গলের একটি মােট দুটি কোম্পানি সঙ্গে নিয়ে বেলােনিয়া যাত্রা করেন। জাফর ইমামের কোম্পানিতে ছিলেন দুর্ধর্ষ যােদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। এ-সময় পাকসেনারা পরশুরাম, চিতলিয়া, ফুলগাজী, মুন্সিরহাট, বেলােনিয়া ও ফেনীতে সুদৃঢ় ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান নিয়েছিল। জাফর ইমাম এবং মােরশেদ তাঁদের সেনাদের নিয়ে গভীর রাতে এমন এক স্থানে উপস্থিত হন যে, শত্রুদের পরশুরাম ও চিতলিয়া ঘাঁটি পুরােপুরি তাঁদের অবরােধের মধ্যে পড়ে। সকালে দেখা যায় একজন পাকিস্তানি অফিসার ও কিছু সেনা বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ ট্রলিতে করে নিয়ে এগিয়ে আসছে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। এতে অফিসারসহ কয়েকজন আহত হয়ে পড়ে যায় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। একজন সাহসী মুক্তিযােদ্ধা এয়ার আলী শত্রুদের পাল্টা গুলিতে শহীদ হন।
১০ই নভেম্বর পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর বােমাবর্ষণ করে। ১১ই নভেম্বর আবার বিমান হামলা চলে। বেলা সাড়ে ৩টায় বিমান মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের দিকে উড়ে আসে। মুক্তিযােদ্ধাদের অন্যান্য অনেক অস্ত্র থাকলেও বিমান বিধ্বংসী কামান ছিল না। মুক্তিযােদ্ধারা বিমান আক্রমণের বিরুদ্ধে এসএমজি ব্যবহার করেন। বিমান বিধ্বংসী কামান নেই জেনেই বিমানগুলাে খুব নিচুতে এসে বােমা ফেলছিল। হঠাৎ এসএমজি-র আওতায় আসতেই আবুল কালাম আজাদের এসএমজি গর্জে ওঠে। দুটি বিমান উড়ে গেলেও আজাদের এসএমজি-র আঘাতে একটি বিমান ঘুরপাক খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সবাই আবুল কালাম আজাদের এ বীরােচতি সাফল্যে তখন উল্লসিত। তাদের মনােবল কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেদিন রাতেই মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিসেনারা বেলােনিয়া ও পরশুরামের ঘাটি দুটির ওপর তীব্র আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে শত্রুরা টিকতে পারেনি, তাদের অবস্থান ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অনেক হানাদার সৈন্য হতাহত হয়। রাতেই পরশুরাম ও বেলােনিয়া মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর দখলে আসে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সুবেদার আবুল কালাম আজাদের অসাধারণ সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রীর নাম মােছা. সালেহা বেগম। এ দম্পতি ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড