বীর উত্তম আবু তালেব শেখ
আবু তালেব শেখ, বীর উত্তম (১৯৪৮-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কালুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কছিম উদ্দিন শেখ এবং মাতার নাম রাশেদান নেছা। তিনি কালুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে ১৯৬৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) বাহিনীতে যােগ দেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আবু তালেব শেখ সাতক্ষীরায় ইপিআর-এর ৫ম ব্যাটালিয়নে সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে আবু তালেব তাঁর ব্যাটালিয়নের বাঙালি সদস্যদের সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ ঘােষণা করে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেক্টর ভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের ভােমরা সাব-সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম (সাব-সেক্টর কমান্ডার) ও সুবেদার তােরাব উল্লাহ (কোম্পানি কমান্ডার)-র নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। তিনি যশাের, খুলনার বৈকালী, ভােমরা ও বশির হাটসহ আরাে কয়েকটি যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন।
আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা ভারত ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করতে থাকেন। এমতাবস্থায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। সাতক্ষীরার লক্ষ্মীপুরে এমনি একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকসেনারা টহল জোরদার করলে মুক্তিযােদ্ধাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ সীমিত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মুক্তিযােদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন আকস্মিক আক্রমণ করে পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্মীপুর ক্যাম্প থেকে তাড়িয়ে দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হন। একদল সামনে থেকে এবং অপর একটি দল পেছন থেকে আক্রমণ করবে বলে স্থির হয়। বাকিরা কাট অফ পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আবু তালেব ছিলেন সামনে থেকে আক্রমণের দলে। সামনে থেকে তাঁরা আক্রমণ করে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যস্ত রাখবেন আর এ সুযােগে পেছন থেকে অন্যদল আক্রমণ করে ক্যাম্প দখল করে নেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবু তালেব ও তার সহযােদ্ধারা সামনে থেকে পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সৈন্যরাও পাল্টা আক্রমণ করে। শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুসেনাদের ছােড়া গুলিতে আবু তালেব শহীদ হন। সহযােদ্ধারা তাঁকে ভােমরার নিকটবর্তী লক্ষদারীতে (ভারত ভূখণ্ডে) সমাহিত করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগ ও বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ সিপাহি আবু তালেব শেখকে ‘বীর উত্তম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৫৩, খেতাবের সনদ নং ৪৬)। এছাড়াও এ বীর মুক্তিযােদ্ধার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য শহীদ সিপাহি আবু তালেব গেট (পিলখানা বিজিবি ৫নং গেট) ও শহীদ সিপাহি আবু তালেব সড়ক (মীরপুর, কুষ্টিয়া) নামকরণ করা হয়। [সােজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড