You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আবু বকর সিদ্দিকী

আবু বকর সিদ্দিকী, বীর বিক্রম (১৯৩০-১৯৭১) শিক্ষক ও শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলাধীন বেলকুচির দেলুয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মনসুর আলী ও মাতার নাম সােনাভান।
৭১ সালে আবু বকর সিদ্দিকী রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশআনসার ও ইপিআর সমন্বয়ে ঐ এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল গড়ে ওঠে। আবু বকর সিদ্দিকী এ দলে যােগ দেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাডেট কলেজের এডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ। আবু বকর সিদ্দিকী চারঘাট এলাকায় ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করে ৭নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিরােধযুদ্ধে অংশ নেন। পাকসেনাদের ৬০ জনের মতাে একটি দল পাবনা থেকে ঈশ্বরদীতে আসার পথে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা সফলভাবে এম্বুশ করলে মেজর আসলামসহ অনেক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। ১২ই এপ্রিল ভােরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বিরাট দল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে আসার পথে আবু বকর সিদ্দিকী চারঘাটের প্রধান সড়কে বাজারসংলগ্ন এলাকায় শত্রুসেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। শত্রুপক্ষও পাল্টা আক্রমণ করে। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের কৌশলী ও বেপরােয়া আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদাররা পশ্চাদপসরণ করে। কিছুক্ষণ পর শক্তি বৃদ্ধি করে শত্রুরা পুনরায় আক্রমণ চালায়। সম্ভাব্য এ আক্রমণের জন্য মুক্তিযােদ্ধারা পূর্ব থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। যথাসময়ে আবু বকর সিদ্দিকীর নির্দেশে মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ শুরু করেন। ভিন্নভিন্ন অবস্থান থেকে মুক্তিযােদ্ধাদের অন্যান্য দল এসেও এযুদ্ধে অংশ নেয়। দিনভর যুদ্ধ চলার পর বিকেলের দিকে সিদ্দিকীর সহযােগী অন্যান্য দল অকস্মাৎ পশ্চাদপসরণ করে। সন্ধ্যার দিকে তাঁর নিজের দলের যােদ্ধারাও গুলিবর্ষণ বন্ধ করে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করলে একটি বাংকারে একজন সহযােদ্ধাসহ তিনি আটকা পড়েন। এ অবস্থায় বিচলিত না হয়ে একাই পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁর গুলি শেষ হয়ে গেলে শত্রুরা তাঁর বাংকার ঘিরে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন এবং জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আবু বকর সিদ্দিকীকে বীর বিক্রম (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহানারা বেগম। এ দম্পতি ৩ পুত্র সন্তানের জনক। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!