বীর উত্তম আবু মঈন মাে. আশফাকুস সামাদ
আবু মঈন মাে. আশফাকুস সামাদ, বীর উত্তম (১৯৪৯-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ফরিদপুর শহরের টেপাখােলা এলাকায় তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিত্রালয় কিশােরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সতেরদরিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আজিজুস সামাদ এবং মাতার নাম সাদেকা সামাদ। তিনি ১৯৬৫ সালে সেন্ট গ্রেগরী স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে বিএসসি (অনার্স) কোর্সে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আশফাকুস সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন এবং সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর কর্মী হিসেবে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে আশফাকুস সামাদ বাঙালি সামরিক, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। তারপর তিনি ভারতে গিয়ে প্রথম বংলাদেশ ওয়ার কোর্সে যােগ দেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন প্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত বাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যােগদান করেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে প্রথম যে ৬১ জন কমিশন প্রাপ্ত সামরিক অফিসার সশস্ত্র বাহিনীতে যােগদান করেন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ৬নং সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরে তিনি একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন।
২০শে নভেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ফুলকুমার নদীর ওপর রায়গঞ্জ ব্রিজ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে এক সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালনার সময় আশফাকুস সামাদ শহীদ হন। ২১শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে রায়গঞ্জ মুক্ত করলে ২২ তারিখ ভােরে মুক্তিযােদ্ধারা শহীদ সামাদের মাথায় গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ দেখতে পান। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ আবু মঈন মাে. আশফাকুস সামাদকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৩৫, খেতাবের সনদ নং ২৮)। এ বীর মুক্তিযােদ্ধার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য জয়মনিরহাট বাজার সংলগ্ন ছােট খাটমারী গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ লেফটেন্যান্ট সামাদ নগর’। প্রতিবছর ২০শে নভেম্বরকে স্থানীয়ভাবে শহীদ লে. সামাদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এছাড়াও তাঁর নামে শহীদ লে. সামাদনগর গার্লস হাইস্কুল, শহীদ লে. সামাদনগর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং রংপুর সেনানিবাস এলাকায় লে. সামাদ বীর উত্তম হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড