বীর প্রতীক আবু মুসলিম
আবু মুসলিম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫৩ সালের ১লা মে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার জারেরা (গঙ্গারকোর্ট) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাে. তালেব আলী সরকার এবং মাতার নাম পেস্কারের নেছা। তিনি জারেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং আকুতপুর হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পড়াশুনা বাদ দিয়ে যুদ্ধে যােগ দেন।
আবু মুসলিম মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ভারতের আসাম যান। সেখানে তিনি ইন্দ্রনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ইন্দনগর থেকে তিনি অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। সেক্টরভিত্তিক কার্যক্রম শুরু হলে তিনি ২নং ও ৪নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।
আবু মুসলিম বৃহত্তর সিলেট জেলার বেশ কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কানাইঘাট থানা আক্রমণে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। আগস্ট মাসে দলনেতা মাহবুবুর রব সাদী, বীর প্রতীক-এর নেতৃত্বে তাঁরা এ আক্রমণে অংশ নেন। থানায় তখন পাকসেনা, ইপিসিএএফ ও পুলিশের সমন্বয়ে শত্রুপক্ষের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। আবু মুসলিম গভীর রাতে পরিচালিত এ আক্রমণের এক পর্যায়ে কয়েকজন সহযােদ্ধাকে নিয়ে। থানার ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাদের অপ্রতিরােধ্য আক্রমণে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা ৩ জন পাকসেনা ও ইপিসিএএফ সদস্যকে থানা থেকে ধরে নিয়ে যান। এ-যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকসেনাদের মনােবল ভেঙ্গে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আবু মুসলিমকে বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪০১, খেতাবের সনদ নম্বর ১৫১)। মুক্তিযুদ্ধের পর আবু মুসলিম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ রেজিমেন্টে জয়দেবপুরে যােগ দেন। তিনি একজন ক্রিড়ানুরাগী সেনাসদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হকি দলের তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলােয়াড় ছিলেন। হকি দলের সদস্য হিসেবে ১৯৮৩ সালে তিনি মালয়েশিয়া যান। হকি খেলােয়াড় হিসেবে তিনি ১৩ বার ‘কালার’ (পুরস্কার) পান। ১৯৮৯ সালে আবু মুসলিম নায়েক হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ফরিদা বেগম। তিনি বর্তমানে মুরাদনগরের জারেরায় বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড