You dont have javascript enabled! Please enable it! রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আবদুস সামাদ আজাদ

আবদুস সামাদ আজাদ (১৯২৬-২০০৫) রাজনীতিক। ১৯২৬ সালের ১৫ই জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার ভুরাখালি গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম মােহাম্মদ শরীয়তুল্লাহ। তাঁর পরিবার প্রদত্ত নাম আবদুস সামাদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নামের শেষে ‘আজাদ’ যুক্ত হয়, যার অর্থ স্বাধীন বা মুক্ত। তিনি ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস এবং ১৯৪৮ সালে সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
আবদুস সামাদ আজাদ ১৯৪০ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তখন তাঁকে সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছাত্রজীবনে তিনি ব্রিটিশ-বিরােধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া তৎকালীন আসাম প্রদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনসংগ্রামেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। সিলেট জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে এসব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তিনি ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন। ভাষা-আন্দোলন-এ অংশ নেয়ার কারণে ১৯৫২ সালে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৫০-এর দশকের শুরুতে তিনি কিছুদিনের জন্য স্কুলশিক্ষক এবং পরে বিমা কর্মকর্তা পদে চাকরি করেন। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বামপন্থী সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সুনামগঞ্জ নির্বাচনি আসন থেকে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
পাকিস্তান সরকার ১৯৫৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করে এবং তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগ-এ যােগ দেন এবং শ্রমবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত থকেন। পুলিশ ধর্মঘটে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৬ সালে তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রধানত পাশ্চাত্যঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দলের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে বামপন্থী হিসেবে পরিচিত ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক একটি অংশ বের হয়ে গিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করে। এর নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে আবদুস সামাদ আজাদ (তখন আওয়ামী লীগের শ্রম-সম্পাদক) ছিলেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করলে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। চারবছর কারাবন্দি থাকার পর ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকারের প্ররােচনায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরােধ করার সময় তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬৯ সালে আবদুস সামাদ আজাদ পুনরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং এর পরপরই দলের সিলেট জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের ভ্রাম্যমাণ দূত হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ ও বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল খুবই প্রশংসনীয়। তিনি হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। ১৯৭১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী নিয়ােগ করে এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
স্বাধীনতার পরে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালের ২৭শে এপ্রিল দুরারােগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [হেলাল উদ্দিন আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড