You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.14 | আবাইপুর যুদ্ধ (শৈলকুপা, ঝিনাইদহ) - সংগ্রামের নোটবুক

আবাইপুর যুদ্ধ

আবাইপুর যুদ্ধ (শৈলকুপা, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ১৪ই অক্টোবর। এটি একটি বেদনাঘন ঘটনা। এতে ৪১ জন অকুতােভয় মুক্তিযােদ্ধা পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা সদর থেকে ১৪ মাইল পূর্বে আবাইপুর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম কুমিড়াদহ। অবস্থানগত সুবিধার কারণে এখানে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি গােপন ঘাঁটি গড়ে ওঠে। শৈলকুপা থানাকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযােদ্ধারা কুমিড়াদহ ঘাঁটিতে এসে সমবেত হচ্ছিলেন। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ ঘাঁটিতে ১০০-১৫০ মুক্তিযােদ্ধা জড়াে হয়েছিলেন।
১৩ই অক্টোবর দুপুরে মুক্তিযােদ্ধারা তাঁদের সাের্স মারফত খবর পান যে, পাকসেনারা পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর থানার খামারপাড়া গ্রামে বাড়িঘরে লুটতরাজ, আগ্নিসংযােগ ও বেপরােয়া গুলিবর্ষণ করছে। সাের্স আরাে খবর দেয় যে, পাকসেনারা আবাইপুর হয়ে এ-পথেই শৈলকুপা সদরে যাবে। তাই মুক্তিযােদ্ধারা তৎক্ষণাৎ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন। যে, পাকসেনাদের প্রতিরােধ করা হবে। বিমান বাহিনী থেকে পালিয়ে আসা এয়ারম্যান মজিবর রহমান স্বেচ্ছায় প্রতিরােধ সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। আবাইপুরে শ্রীপুরশৈলকুপা প্রধান সড়কের পাশে পরিখা খনন করে শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা ৩টি দলে ভাগ হয়ে তিনটি পয়েন্টে অবস্থান নেন। তাঁদের নেতৃত্ব দেন তিনজন মুক্তিযােদ্ধা – নজরুল ইসলাম (ওয়াপদা পয়েন্টে), মাে. লুৎফর রহমান বিশ্বাস (ক্যানাল ব্রিজের পূর্বপাশের পয়েন্টে) এবং গােলাম রইচ (পশ্চিমে নদীর ধার পয়েন্টে)।
১৩ই অক্টোবর বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মুক্তিযােদ্ধারা পরিখার মধ্যে এম্বুশ করে অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁদের এম্বুশের খবর গােপনে পৌঁছে যায় শ্রীপুরে অবস্থানরত পাকসেনাদের কাছে। মধ্যরাতের অন্ধকারে তারা শ্রীপুর থেকে এসে মুক্তিযােদ্ধাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সার্চলাইট নিক্ষেপ করে বৃষ্টির মতাে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। অপ্রত্যাশিত এ আক্রমণে মুক্তিযােদ্ধারা প্রথমে হতবিহ্বল হয়ে পড়লেও মুহূর্তের মধ্যে তারা পরিস্থিতি সামলে নেন এবং সারারাত ধরে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ভাের হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনারা দ্রুত শৈলকুপার দিকে পালিয়ে যায়। কিন্তু অর্তকিত আক্রমণে ৩৫ জন মুক্তিযােদ্ধা এম্বুশস্থলেই শহীদ হন। পাকসেনারা ৬ জন মুক্তিযােদ্ধাকে ধরে নিয়ে শৈলকুপা ব্রিজঘাটে গুলি করে হত্যা করে। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট নিহত হয়। আবাইপুরের এ যুদ্ধের খবর ঐদিনই বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তরে পৌঁছে যায় এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও কোলকাতার আকাশ বাণী কেন্দ্র থেকে গুরুত্বের সঙ্গে তা প্রচার করা হয়। [মাে. আব্দুল ওহাব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড