বীর প্রতীক আবদুল গফুর
আবদুল গফুর, বীর প্রতীক (১৯৫১-২০১৪) সেনাবাহিনীর হাবিলদার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে গােপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাতেম মােল্লা এবং মাতার নাম সাজু খাতুন। ২ ভাই ও ২ বােনের মধ্যে আবদুল গফুর ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি রাজপাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন।
১৯৭১ সালে তিনি যশাের সেনানিবাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এ রেজিমেন্টকে পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে বদলি করা হয়। এ কারণে বাঙালি সেনা সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছুটিতে বাড়ি চলে যান এবং অধিকাংশ যশােরের চৌগাছায় শীতকালীন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। আবদুল গফুরও শীতকালীন প্রশিক্ষণে চৌগাছায় চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রশিক্ষণরত সেনাদের যশাের সেনানিবাসে ফিরে আসতে নির্দেশ দেয়া হয়। ২৯শে মার্চ গভীর রাতে তারা যশাের সেনানিবাসে ফিরে আসেন। ৩০শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫ বেলুচ ও ২২ ফ্রন্টিয়ার্স ফোর্স বাঙালি সৈনিকদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। হাবিলদার আবদুল গফুরসহ অন্যান্য বাঙালি সেনারা পাকবাহিনীর আক্রমণের পাল্টা জবাব দেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে সেনানিবাস থেকে বের হয়ে চৌগাছায় সহযােদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে গিয়ে তারা ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ভারতের তেলঢালায় গিয়ে ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন। আবদুল গফুরকে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভাে কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ধানুয়া-কামালপুর, সিলেটের কানাইঘাট, চারগ্রাম, এম সি কলেজ প্রভৃতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৩০-৩১শে জুলাই ধানুয়া-কামালপুরের যুদ্ধে তিনি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। সিলেটের চারগ্রামের যুদ্ধটি তার করা সবচেয়ে স্মরণীয় যুদ্ধগুলাের একটি। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। ২২শে নভেম্বর ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা ঐ ঘাঁটি আক্রমণ করলে সেখানে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং ২০ জন পাকসেনাকে মুক্তিযােদ্ধারা বন্দি করতে সক্ষম হন। অপরদিকে ৫ জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। চারগ্রাম মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে। এ-যুদ্ধে আবদুল গফুর অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ সরকার সুবেদার আবদুলগফুরকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের ৯ই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৩ ছেলে এবং ৩ মেয়ের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড