বীর প্রতীক আবদুল জব্বার
আবদুল জব্বার, বীর প্রতীক (১৯৩৬-২০১১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩৬ সালে চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার কামরাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইসমাইল হােসেন মিজি এবং মাতার নাম শহর ভানু। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহাতলী হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এ চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি রাজশাহী হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে নওগাঁ উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে বিদ্রোহ করে তাঁর সহযােদ্ধাদের সঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। তিনি জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জয়পুরহাট দখলে নিলে তিনি তার সহযােদ্ধাদের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্থানে এম্বুশ, রেইড ও গেরিলা হামলা চালিয়ে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তােলেন। জুন মাসে মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম- তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ান কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং তার ব্যাটালিয়ানে সৈন্য ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ইপিআর, মুজাহিদ, আনসার ও ছাত্রযুবকদের রিক্রুট করেন। এ সময় আবদুল জব্বারকে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে তিনি তেলঢালায় যান। তেলঢালায় প্রশিক্ষণ শেষে এ রেজিমেন্টকে যুদ্ধের উপযােগী করে ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত করা হলে তিনিও তাতে অন্তর্ভুক্ত হন। আবদুল জব্বার ক্যাপ্টেন আনােয়ারের নেতৃত্বে সুবেদার হাফিজের প্লাটুনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ৩১শে জুলাই জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাটে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এক সম্মুখ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেন। এরপর তিনি ধানুয়া-কামালপুর, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, কোদালকাঠি, সিলেট জেলার গােয়াইনঘাট, গােবিন্দগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১২-১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যসহ তাদের সহযােগী হিসেবে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ও রাজাকাররাও ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের গােলার আঘাতে পাকবাহিনীর অধিকাংশ বাংকার ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে অনেক হানাদার সৈন্য হতাহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় আবদুল জব্বারকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২০১১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পরলােকগমন করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম। এ দম্পতি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড