You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম আবদুল মান্নান

আবদুল মান্নান, বীর বিক্রম (১৯৪৮-১৯৭১) কনস্টেবল ও ১নং সেক্টরের অধীন ঋষিমুখ সাব-সেক্টরের শহীদ বীর শহীদ মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নােয়াগ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল লতিফ এবং মাতার নাম রাবেয়া খাতুন। ৪ ভাই ও ৪ বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
নােয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শ্যামগ্রাম মােহিনী কিশাের উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে তিনি ১৯৬৭ সালে পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল হিসেবে ঢাকা জেলার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স-এ যােগদান করেন। সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের পর তিনি চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্স-এ নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ তিনি রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইন্স-এ কর্মরত ছিলেন। ২৬শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি প্রতিরােধ যুদ্ধ এবং ইপিআর বাহিনীর সঙ্গে কালুরঘাট যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পাকবাহিনীর আক্রমণে কালুরঘাটের পতন হলে অন্যদের সঙ্গে তিনি ভারতে যান। সেখানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ১নং সেক্টরে যােগ দিয়ে তিনি ঋষিমুখ সাব-সেক্টরের বিভিন্ন যুদ্ধ এবং অপারেশেনে ভূমিকা রাখেন। এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা বাচ্চু। আবদুল মান্নান সাহসী যােদ্ধা হিসেবে খ্যাত ছিলেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযােদ্ধা অক্টোবর মাসে মদুনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র আক্রমণ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। মদুনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের উত্তর এবং হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। এ কেন্দ্রের চারদিকে পাকবাহিনীর বাংকার ছিল। সব সময় এখানে ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকসেনা ও রাজাকার পাহারায় থাকত। ৬ই অক্টোবর বিমান বাহিনীর সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম- (পরে এয়ার মার্শল)-এর নেতৃত্বে একটি মুক্তিযােদ্ধা দল এখানে আক্রমণ পরিচালনা করে। অন্যদের সঙ্গে আবদুল মান্নানও এ দলে ছিলেন। মধ্যরাতে আবদুল মান্নান ও অন্য মুক্তিযােদ্ধারা রকেট লাঞ্চার দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়েকটি রকেট নিক্ষেপ করেন। সঙ্গে-সঙ্গে কেন্দ্রের তিনটি ট্রান্সমিটারে আগুন ধরে যায়। কিন্তু পাহারারত পাকসেনারা মুক্তিযােদ্ধাদের দিকে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আবদুল মান্নান ও কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধার ওপর গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল মান্নান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং শহীদ হন। এযুদ্ধে দলনেতা সুলতান মাহমুদসহ কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। রাউজান উপজেলার আবুল মিল গ্রামের বৌদ্ধভূষণ বড়য়ার বাড়ির নিকট তাকে সমাহিত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কনস্টেবল আবদুল মান্নানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [এ এস এম আরেফিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!