বীর বিক্রম আবদুল মােতালেব
আবদুল মােতালেব, বীর বিক্রম নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া বাজারের পূর্বশ্রীকোলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গােলাম ছারােয়ার মিয়া এবং মাতার নাম আমেনা বেগম।
আবদুল মােতালেব ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি সৈয়দপুর সেনানিবাসে ৩য় ইস্ট বেঙ্গলে নিয়ােজিত ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ২৫শে মার্চের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং সৈয়দপুর সেনানিবাসে বাঙালি সেনাদের ওপর আক্রমণ তাঁকে বিদ্রোহী করে তােলে। অন্যান্য বাঙালি সেনাদের সঙ্গে তিনিও অস্ত্রহাতে পাকসেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। সেনানিবাসে প্রাথমিক প্রতিরােধ ব্যর্থ হলে তিনি সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে পড়েন। তিনি ও তাঁর সঙ্গের সেনারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে একত্রিত হন। আবদুল মােতালেবের দলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আনােয়ার হােসেন। ক্যাপ্টেন আনােয়ার পরবর্তীতে মেজর শাফায়াত জামিল, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে ৩য় বেঙ্গল সংগঠিত করে এ বাহিনীতে থেকে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরােধের প্রথম পর্যায়ে ৯, ১০ ও ১৯শে এপ্রিল পাকসেনাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন আবদুল মােতালেব। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে আরাে প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুনরায় প্রবেশ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণ, এম্বুশ ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
মােহনপুর হচ্ছে দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ১০ মাইল দূরে। এখানে একটি সেতু ছিল। সেতুটি বেশ বড় এবং যাতায়াতের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেতুর নিকটেই একটি পাকিস্তানি ঘাঁটি থাকায় পাকসেনাদের জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যা তাদের সরবরাহ লাইনের সঙ্গে যুক্ত। মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষ থেকে সেতুটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়। ২৭শে এপ্রিল মােতালেব ও তার দল ভােররাতে সেতুটিতে পৌঁছান। সেতুটিতে বিস্ফোরক স্থাপন করে তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকেন। দিনের আলাে ফুটতেই সেতুটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। মােতালেব ও তাঁর সঙ্গীরা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযােগ পেলেন না। নিকটস্থ পাকিস্তানি ঘাঁটি থেকে তাঁদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু হয়। ঐ ঘাঁটিতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর হাতে ছিল অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। তাদের তীব্র আক্রমণে মােতালেবের সঙ্গী মুক্তিযােদ্ধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অনেকেই হতাহত হন। আবদুল মােতালেবের দলটি মরণপণে তাঁদের অবস্থান ধরে রাখেন। আক্রমণ তীব্রতর হলে তাঁর ২ সহযােদ্ধা শহীদ এবং ৩ জন আহত হন। কিন্তু তিনি পজিশন ত্যাগ করেননি। এমনি অবস্থায় মােতালেব গুলিবিদ্ধ হন। শত্রুর ছােড়া একাধিক গুলি তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। চিকিৎসার জন্য তাঁকে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই তিনি শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরােচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগ করায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শহীদ আবদুল মােতালেবকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম হাছিনা মােতালেব। তারা ১ সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড