আবদুর রব সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাত (১৯২১-১৯৭৫) বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের ৯ম জোনের বেসামরিক প্রশাসক। বরিশাল জেলার গৌরনদী (বর্তমান আগৈলঝরা উপজেলা) থানার সেরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর খালেক সেরনিয়াবাত এবং মাতা হুরুন নেছা। ১৯৩৯ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। বরিশাল বি এম কলেজ থেকে ১৯৪১ সালে আইএ পাস করার পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে বিএ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি বরিশাল বারে যােগ দেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছােট বােনের স্বামী।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি কলকাতা থেকে বরিশালে চলে আসেন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগ-এ যােগদানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের তিনি সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ সালে হাজী মােহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বে গঠিত বামপন্থী মতাদর্শ অনুসারী গণতান্ত্রিক দলের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতে যােগ দেন। ১৯৫৭-১৯৬২ পর্যন্ত তিনি বরিশাল জেলা ন্যাপ-এর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৬২ সালে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত আইয়ুববিরােধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাের্চা ন্যাশনাল ডেমােক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এ তিনি যােগদান করেন। পাকিস্তান আমলে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন পরিচালনার স্বার্থে বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৯ম জোনের তিনি প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবদুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভায় ভূমিমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতক-খুনি চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পাশাপাশি আবদুর রব সেরনিয়াবাতকেও তাঁর এক কন্যা, এক পুত্র ও কয়েকজন নিকট আত্মীয়সহ নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁকে বনানী কবর স্থানে সমাহিত করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড