You dont have javascript enabled! Please enable it! চার খলিফা খ্যাত ছাত্রনেতাদের অন্যতম আবদুল কুদ্দুস মাখন - সংগ্রামের নোটবুক

আবদুল কুদ্দুস মাখন

আবদুল কুদ্দুস মাখন (১৯৪৭-১৯৯৪) চার খলিফা খ্যাত ছাত্রনেতাদের অন্যতম, ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারানির্যাতন ভােগকারী। তিনি ১৯৪৭ সালের ১লা জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা (বর্তমান জেলা)-র মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মােহাম্মদ আবদুল আলী, মাতা আমেনা খাতুন। ৭ ভাই ও ২ বােনের মধ্যে আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন ৩য়।
আবদুল কুদ্দুস মাখন স্কুল জীবন থেকেই একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মােহাম্মদ হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৯ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ঐ বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। আবদুল কুদ্দুস মাখন হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলের ছাত্রদের সংগঠিত করে ১৯৬২ সালে ‘শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপাের্টবিরােধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের মাঝে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষিত ৬ দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৬৬-৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ২রা মার্চ গঠিত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৪ জন কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে অন্যতম আবদুল কুদ্দুস মাখন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রভাগে। ২রা মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় ছাত্র-জনতার সমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা প্রদর্শনকারী ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আবদুল কুদ্দুস মাখন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার সভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ অনুষ্ঠানের তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
২৩শে মার্চ আবদুল কুদ্দুস মাখন ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্য নেতৃবৃন্দ সারাদেশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন’ অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেন। তারা এ দিন পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও জয়বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ দিন তিনি ও অন্য নেতৃবৃন্দ ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন।
আবদুল কুদ্দুস মাখন মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা (চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা নােয়াখলী এবং ফরিদপুরের একাংশ)-র মুক্তিযােদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর ২৩শে আগস্ট আব্দুল কুদ্দুস মাখনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ কারাভােগের পর ১৯৭৮ সালের ১২ই নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে আবদুল কুদ্দুস মাখন হাসমত জাহান হাসুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তারেক মােহাম্মদ আলী নামে ১ পুত্র ও ফারজানা শারমীন রূপা নামে ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বিশিষ্ট ছাত্রনেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৯৪ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৫ই ফেব্রুয়ারি তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। [হারুন-অর-রশিদ ও শফিউদ্দিন তালুকদার]
তথ্য-সহযােগিতায়: মিজানুর রহমান, সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড