You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে আনােয়ারা উপজেলা

আনােয়ারা উপজেলা (চট্টগ্রাম) রাজনীতি-সচেতন একটি এলাকা। এখানকার মানুষ পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আনােয়ারা-বাঁশখালী-কুতুবদিয়া এলাকা থেকে আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ এবং আনােয়ারা-পশ্চিম পটিয়া থেকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপিএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় দেশব্যাপী অসহযােগ আন্দোলন। আনােয়ারাবাসী এ আন্দোলনের সকল কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে। এরপর বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এ উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়।
৭ই মার্চের পর আনােয়ারা থানা আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপিএ, এম ইদ্রিচ বিকম, এম এ হক (থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি) ও নাসির উদ্দিন (থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক)। সংগ্রাম পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন- আবদুছ সালাম আনােয়ারী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী, ছালে আহমদ চেয়ারম্যান, আবু বক্কর সিদ্দিকী, নাসির উদ্দিন, জামাল মিস্ত্রি, নিত্যপ্রিয় দাশ, নুরুল ইসলাম জেহাদী, ছালেহ জহুর, নাগু সওদাগর, কাজী আবদুল হক, তােরাব উদ্দিন চৌধুরী, আলী মিয়া চৌধুরী, নুরুন্নবী চৌধুরী, আবদুল মােতালেব মাস্টার, আব্দুস ছােবান মাস্টার, সাংবাদিক খলিলুর রহমান, অজিত দাশ, মিলন দাশ (খােকা বাবু), মাস্টার ইব্রাহিম চৌধুরী, আসহাব মিয়া, মাে. সােলায়মান বাদশা, এম এ কাসেম, মাস্টার আবুল হাশেম, মেম্বার হাফেজ আহমদ, হাফেজ মােহম্মদ শরীফ, আবদুছ ছালাম, আবদুল গফুর, সত্যবাবু, কিরীটী ভূষণ দাশগুপ্ত, বিশ্বেশ্বর গুপ্ত, মনির আহমদ চৌধুরী, কফিল উদ্দিন প্রমুখ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক (ছাত্রলীগ-এর কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক) সেলিম চৌধুরী, শওকত হাফিজ খান রুশি, এ টি এম জাফরুল্লা চৌধুরী, আবুল মনসুর চৌধুরী (থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), কাজী মােহাম্মদ ইউসুফ, মাে. নুরুল আমিন, খােরশেদুল ইসলাম; স্কুল পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিলেন ইদ্রিছ আনােয়ারী, আবুল কাসেম, জামাল খান, অলি আহমদ, কাজল ভট্টাচার্য, কাজী সিরাজ প্রমুখ।
কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ- ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর নেতাকর্মীরা ‘অপারেশন কমান্ড কাউন্সিল’ নামে বিশাল গেরিলা স্কোয়াড গড়ে তােলেন। ন্যাপ নেতা এডভােকেট আবদুল জলিল চৌধুরী ও শওকত আলী এবং ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বাহাউদ্দিন খালেক শাহাজী, নুরুল আলম, কাজল মিত্র, ফজল করিম, নুরুল ইসলাম, মফিজুর রহমান ও শম্ভু পালের নেতৃত্বে এ গেরিলা স্কোয়াড গঠিত হয়।
২৫শে মার্চের পর প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। শােলকাটা ও শিলাইগড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরৈকোড়া উচ্চবিদ্যালয় এবং আনােয়ারা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠসহ বিভিন্ন গ্রামে ছাত্র-যুবকরা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিরােধে ছাত্র-যুবকরা স্থানীয়ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা কৌশলে শহর থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে গ্রামে নিয়ে আসেন। ইপিআর ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা কেউ-কেউ অস্ত্রসহ পালিয়ে গ্রামে আসেন। এলাকার ছাত্র-যুবকরা এসব অস্ত্রের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ২৬শে মার্চ সকাল ১১টায় আনােয়ারা উচ্চবিদ্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মােতালেব। সভা শেষে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ-সময় উপস্থিত ছিলেন। থানা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে আনােয়ারার স্বাধীনতাপ্রেমী ছাত্র-যুবক-জনতা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। এ-সময় কালুরঘাটে অবস্থান নেয়া বাঙালি সৈনিকদের জন্য আনােয়ারা থানা সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী প্রেরণ করা হয়। কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে পালিয়ে আসা হাজার-হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ৩১শে মার্চ পাকবাহিনী চট্টগ্রাম শহর দখল করে নিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের জিএস আবদুর রব, সিটি কলেজের এজিএস সাইফুদ্দিন খালেদ (আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহম্মদ চৌধুরীর বড় ছেলে), জেলা ছাত্রনেতা রবিউল হােসেন কচিসহ ৩০ জনের মতাে ছাত্রনেতা আত্মরক্ষার্থে আনােয়ারায় চলে যান। তারা স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণের আয়ােজন করেন এবং আনােয়ারাকে মুক্ত এলাকা ঘােষণা করেন। নিরাপদ ভেবে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আনােয়ারায় এলে তারা তাদের নিরাপত্তা প্রদান ও খাদ্যের সংস্থান করেন।
এপ্রিলের শুরুতে অনেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাও আনােয়ারায় চলে আসেন। আনােয়ারার ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ভুপাল দাশগুপ্তের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শামসুজ্জমান হীরা, মােয়াজ্জেম হােসেন (খুলনা), চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জাহেদসহ বেশ কয়েকজন নেতা আনােয়ারায় আসেন। তারা শিলাইগড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও দিঘিরপাড়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। প্রশিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য আবদুল করিম ও পুলিশ কনস্টেবল শামসুদ্দিন। ৭০ জনের অধিক যুবক এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এখান থেকে ২৫ জনের মতাে ছাত্র করলডেঙ্গা পাহাড়ে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
সশস্ত্র প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ২রা মে আনােয়ারা থেকে সর্বপ্রথম একদল মুক্তিযােদ্ধা হাজীগাঁও গ্রামের কাজী মােহাম্মদ ইদ্রিছের নেতৃত্বে ভারতে যান। এ দলে কাজী ইদ্রিছের সঙ্গে ছিলেন আনােয়ারা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ইদ্রিছ আনােয়ারী, বটতলী গ্রামের মােহাম্মদ নাসিম, ছৈয়দ নুর ও নুরুল আলম। ফেনী হয়ে ভারতের হরিনা ক্যাম্পে গিয়ে তারা প্রশিক্ষণে যােগদান করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত ছাত্রনেতা ছাবের আহামদ আজগরীর অনুরােধে কাজী ইদ্রিছ পুনরায় আনােয়ারায় চলে আসেন এবং ১৮ই মে দ্বিতীয় দলটি নিয়ে তিনি ফেনী হয়ে পুনরায় ভারতের হরিনা ক্যাম্পে গমন করেন। এ দলে ছিলেন বরুমচড়া গ্রামের মাে. আবুল কাশেম, আবদুল গফুর, মমতাজ উদ্দিন, মােহাম্মদ ছৈয়দ, আবদুর রাজ্জাক ও মােহাম্মদ রফিক (আয়ুব), পীরখাইন গ্রামের মােহাম্মদ হােসেন বাবু, পশ্চিমচাল গ্রামের ফজল আহাম্মদ ও শােলকাটা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম খান। একইভাবে ২৯শে জুলাই তৃতীয় গ্রুপটি আনােয়ারা থেকে হরিনা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ গ্রুপে ছিলেন বরুমচড়ার এস এম নুরুল আমিন, রশিদ আহমদ, মােহাম্মদ শফি, বারখাইনের নুরুল ইসলাম আবু, নুরুল আমিন প্রমুখ। ট্রেনিং শেষে ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া, বােয়ালখালী, আনােয়ারা ও পাঁচলাইশ থানার ১২০ জন মুক্তিযােদ্ধা মেজর রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ১নং সেক্টরের (দক্ষিণ চট্টগ্রামের) অধীনস্থ কমান্ডার সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে হরিনা ক্যাম্প ত্যাগ করেন। আনােয়ারা, পটিয়া ও বােয়ালখালী থানার অধিনায়ক নির্বাচিত হন সার্জেন্ট মহিউল আলম। ঐ সময় বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া থানায় কোনাে সংগঠিত দল না থাকায় ঐ অঞ্চলের দায়িত্বও তাঁর হাতে অর্পণ করা হয়। ১২০ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে সার্জেন্ট মহিউল আলম রামগড় বর্ডার অতিক্রম করে পাগলাছড়ি বাজারে এসে পৌছান। কিন্তু পথিমধ্যে শান্তি কমিটি নেতা জনৈক চাকমা সর্দার মুক্তিযােদ্ধাদের আগমন বার্তা পৌছে দেয় পাকহানাদারদের কাছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযােদ্ধারা অভিযান চালিয়ে শান্তি কমিটির ঐ নেতাকে হত্যা করে অদূরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন। চট্টগ্রামে প্রবেশের পর এটা ছিল তাঁদের প্রথম অপারেশন। এ ঘটনার কারণে তাদেরকে পূর্বনির্ধারিত পথ পরিবর্তন করতে হয়। ফলে গভীর জঙ্গল পেরিয়ে সীমাহীন কষ্ট ভােগ করে আনােয়ারায় পৌছতে তাঁদের ১৫ দিন সময় লাগে।
ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় প্রবেশ করে সার্জেন্ট মহিউল আলম দলীয় কমান্ডারদের নেতৃত্বে গ্রুপগুলােকে বিদায় দেন এবং অন্যদের নিয়ে তিনি চলে আসেন বােয়ালখালীর ধলঘাট গ্রামের দত্তবাড়িতে। এ বাড়ি থেকেই পটিয়া ও বােয়ালখালীর গ্রুপ তাদের দলীয় কমান্ডারের নেতৃত্বে ভাগ হয়ে যায়। সার্জেন্ট মহিউল আলম থেকে যান। দত্তবাড়ি থেকে আনােয়ারা গ্রুপের ১৯ জন মুক্তিযােদ্ধাকে তিনি এমনভাবে ভাগ করে দেন যেন তারা দুজন-দুজন করে নিজ-নিজ এলাকায় পৌছাতে পারেন। এরপর তাঁরা পটিয়ার বুধপুরা হয়ে পরৈকোড়া গ্রামে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে যাঁদের বাড়ি পূর্ব আনােয়ারায় তারা চলে আসেন পাঠনীকোটা গ্রামের মহাজন বাড়িতে। এ বাড়ি থেকে কমান্ডার কাজী ইদ্রিছের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পশ্চিম আনােয়ারায় রওয়ানা হয়। আনােয়ারা গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে তাঁরা পশ্চিমে ধানপুরা ব্রিজ পার হয়ে শােলকাটা এবং সেখান থেকে সরাসরি হাজীগাঁও গ্রামস্থ পাহাড়ে পৌছান। সার্জেন্ট মহিউল আলম নির্দেশ দেন যে, তারা যেন নিজের পরিচয় গােপন রেখে সুবিধামতাে নিজ কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করেন এবং দূত মারফত যখনই যেই নির্দেশ যায়, সঙ্গে-সঙ্গে যেন সাড়া দেন। এভাবে ভারত থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে ১৯ জন মুক্তিযােদ্ধা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আনােয়ারায় চলে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে আনােয়ারা উপজেলার পশ্চিমচাল গ্রামের বখতিয়ার পাড়ার (লন্ডনী পাড়া) লন্ডন প্রবাসীদের উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রয়েছে। বখতিয়ার পাড়ার বহু পরিবার লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে এবং সেখানে তারা বখতিয়ার সােসাইটি নামে একটি সমিতি গড়ে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা বখতিয়ার সােসাইটিতে মিলিত হয়ে এর সকল সদস্যকে (১৩২ জন) নিয়ে বাংলাদেশ একশন কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বখতিয়ার সােসাইটি ও বাংলাদেশ একশন কমিটি গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। এ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে বখতিয়ার সােসাইটির সভাপতি আলহাজ মদিনুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক জে এম আলী (জিমি আলী)। একশন কমিটি মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড গঠন, সভা-সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন, পাকবাহিনী কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের ছবি প্রদর্শনসহ নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আনােয়ারা উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষস্থানীয় সংগঠকগন ছিলেন- আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ (তৈলারদ্বীপ), আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপিএ (হাইলধর), এম এ হক (সভাপতি, আনােয়ারা থানা আওয়ামী লীগ, বৈরাগ) ও নাসির উদ্দিন (সাধারণ সম্পাদক, আনােয়ারা থানা আওয়ামী লীগ, বারখাইন)। অন্য সংগঠকরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা এম ইদ্রিছ বিকম (হাইলধর), আবদুল মাবুদ চৌধুরী (বারখাইন), ছালে আহমদ (চেয়ারম্যান, বারখাইন), আবদুছ সালাম আনােয়ারী (তৈলারদ্বীপ), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (বারখাইন), নিত্যপ্রিয় দাশ (বােয়ালগাঁও), হাফেজ আহমদ ওরফে সাহেব মিয়া মেম্বার (বরুমচড়া), নুরুল ইসলাম জেহাদী (রায়পুর), এ আর চৌধুরী (রায়পুর), জামাল মিস্ত্রী (গহিরা), হাফেজ মােহাম্মদ শরীফ (গহিরা), চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী (উঁইদন্ডী), মাহবুব আলম ওরফে নাগু কন্ট্রাক্টার (দেওতলা), কবিরাজ অমরেন্দ্র দাশগুপ্ত (পাঠনীকোটা), মনির আহমদ চৌধুরী (বটতলী), নজির আহমদ সওদাগর (বটতলী), আবুল ফয়েজ চৌধুরী (বটতলী), আবুল কাসেম মেম্বার (মাহাতা), ইব্রাহিম মাস্টার (মাহাতা) ও ডাক্তার নির্মল চন্দ্র দাশ (বারখাইন); ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা এডভােকেট আবদুল জলিল চৌধুরী (শিলাইগড়া) ও শওকত আলী (শােলকাটা); বিশ্বেশ্বর গুপ্ত (বারখাইন), মাস্টার আবুল হাশেম (বারখাইন), মাস্টার আবদুস ছােবান (বােয়ালিয়া), মাস্টার আবদুল মােতালেব (প্রধান শিক্ষক, আনােয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়; শিলাইগড়া), পীযূষ কান্তি চৌধুরী (আওয়ামী লীগ সমর্থক, আনােয়ারা), বাহাউদ্দিন খালেক শাহাজী (সভাপতি, আনােয়ারা থানা ছাত্র ইউনিয়ন) প্রমুখ।
এখানকার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন- এফএফ- ৩৬ গ্রুপ কমান্ডার কাজী মাে. ইদ্রিছ (হাজিগাঁও), এফএফ ৩৫ ভারপ্রাপ্ত গ্রুপ কমান্ডার আবদুর রাজ্জাক, এফএফ ৩৬-বি – কমান্ডার নুরুল আমীন, বিএলএফ থানা কমান্ডার সেলিম চৌধুরী, এফএফ গ্রুপ ১৮০- কমান্ডার বাদল চন্দ্র ঘােষ। অপারেশন কমান্ডার ছিলেন- রশিদ আহমদ (এফএফ), আবদুর রাজ্জাক (এফএফ) এবং নুরুল ইসলাম আবু (এফএফ)। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সংগঠিত গ্রুপ কমান্ডাররা ছিলেন- আবদুল লতিফ চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার, বারখাইন), কাজী আবদুল হক (গুয়াপঞ্চক), মাস্টার শামশুল আলম (চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক, মালঘর), সুবেদার আলী আহমদ (ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, হাইলধর), ফ্লাইট সার্জেন্ট নুরুল আলম (বিমান বাহিনী, পীরখাইন), মাস্টার আবুল হাশেম (পূর্ব বারখাইন), বাহাউদ্দিন খালেক শাহাজী (গেরিলা বাহিনীর সদস্য, শিলাইগড়া) ও হাবিলদার মদন আলী (গুন্ধীপ)।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও আনােয়ারা উপজেলাকে কেন্দ্র করে বরিশালের অধিবাসী সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে একটি বাহিনী গড়ে ওঠে। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৫০ জনের মতাে। এটি মহিউল আলম বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সৈনিক, সুবেদার, হাবিলদার, ল্যান্স নায়েক এবং ক্যান্টেনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। ১৭ই নভেম্বর রাতে বাঁশখালী উপজেলার চাঁদপুরে একটি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনের সময় সার্জেন্ট মহিউল আলম গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
১৪ই এপ্রিল পাকবাহিনী আনােয়ারা উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে। চট্টগ্রাম শহর থেকে পাকবাহিনীর কয়েকটি সাঁজোয়া যানবাহন কালুরঘাট ব্রিজ পাড় হয়ে তৈলারদ্বীপের বারখাইন গ্রামে প্রবেশ করে। তারা বারখাইনের বটতলায় গাড়িবহর থামিয়ে আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ-এর বাড়িতে হানা দেয়। হানাদাররা গান পাউডার ছিটিয়ে বাড়িটি নিমিষে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় এবং সন্ধ্যার দিকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যায়। পরবর্তীতে আনােয়ারা থানার বন্দর গ্রামে অবস্থিত চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে পাকহানাদার বাহিনী একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে। এখান থেকেই নিয়মিত তারা বিভিন্ন এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করত ও লােকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিত।
এডভােকেট ফজলুল করিমকে (আনােয়ারা থানা মুসলিম লীগ সভাপতি) আহ্বায়ক এবং জালাল চৌধুরী জোল্যাকে (গহিরা) যুগ্ম আহ্বায়ক করে আনােয়ারা থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলাে- খায়ের আহমদ চৌধুরী, মােহাম্মদ আলী খান, গণি চৌধুরী, আলম খান, চেয়ারম্যান এয়াকুব আলী চৌধুরী, আবদুচ ছােবান চৌধুরী, নবাব উদ্দিন চৌধুরী, ছৈয়দ মাহমুদ, ফয়েজ আহমদ চৌধুরী, আবুল বশর, আবদুর রহিম, আবদুল আজিম চৌধুরী, বদিউর রহমান, হুমায়ুন কবির, সিরাজুল ইসলাম, মােস্তাক আহমদ ডিলার, আলী আহামদ তালুকদার, আলী হােসেন কন্ট্রাক্টর, নুর মােহাম্মদ চৌধুরী, নেজাম খান, মােহাং নাছিম, আহামদ হােসেন, ডাক্তার মােহাম্মদ ইসহাক, আহমদ হােসেন, মফজলুর রহমান চৌধুরী, আবদুল জলিল মাস্টার, মওলানা আবু নছর, মােহাম্মদ হােসেন, নুরুল আবসার, আবদুল হাকিম, বদিউর রহমান, নুরুল আবসার চৌধুরী, আবদুল জলিল মাস্টার, আলতাফুর রহমান, বজলুল করিম চৌধুরী, হেফাজেতুর রহমান চৌধুরী, আবদুর রহিম সওদাগর, আবদুল হাকিম, আবদুল হাকিম দুষ্টুমিয়া, শামসুল করিম চৌধুরী প্রমুখ। জালাল চৌধুরী জোল্যা প্রথমে থানা আলশামস বাহিনীর প্রধান ছিল এবং ঐ সময় রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল আবদুল জলিল মাস্টার। আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিল হাফেজ মকবুল আহমদ। কিছুদিন পর তিনবাহিনীর সমন্বয়ে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়, যার প্রধান ছিল জালাল চৌধুরী জোল্যা। তার অধীনস্থ বিভিন্ন এলাকার কমান্ডাররা হলাে- বারখাইনের মাহাবুবুর রহমান, তৈলারদ্বীপের আবদুল জলিল মাস্টার, রুদুরার নুরুল আমীন (যুদ্ধকালে নিহত), ওসখাইনের আবদুল হাকিম (যুদ্ধকালে নিহত), বরিয়ার আবদুল হাকিম দুধুমিয়া (টিক্কাখান হিসেবে পরিচিত), বােয়ালিয়ার আলী আহামদ তালুকদার, খাসখামার নুরুল আবছার (হাইলধর ইউনিয়নের রাজাকার কমান্ডার), বাচামিয়া মাঝি, কাসেম মেম্বার, আহমদ ছফা (যুদ্ধকালে নিহত), বজল আহামদ ওরফে বজলা, মনসুর আলী ও নুরুল আমীন (বটতলী বাজারে নিহত), নেজাম খান, আহমদ ছফা, বদিউল আলম (সুপারি বেপারী), বদিউল ইসলাম (গলাবাকা), আবু তাহের ও বশির আহামদ।
আনােয়ারা থানার রাজাকার কমান্ডার ছিল শান্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জালাল চৌধুরী জোল্যা। শান্তি কমিটির অধীনে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীতে ৫০০ জন সদস্য নিয়ােগ লাভ করে। এর মধ্যে জোল্যার অধীনে থানা হেডকোয়ার্টার্সে ২০০ এবং প্রতি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির আহ্বায়কের অধীনে ১০ জন করে রাজাকার নিয়ােগপ্রাপ্ত হয়। ২০০ জন রাজাকার সার্বক্ষণিক থানা কমান্ডারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করে। থানা পুলিশসহ এ বাহিনী সাব মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর চিটাগাং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করে। তাদের নেতৃত্বে ও স্থানীয় দোসরদের সহযােগিতায় এলাকার খবরাখবর সংগ্রহ করা হতাে। এছাড়া আলবদর কমান্ডার হাফেজ মকবুল আহমদ, রাজাকার কমান্ডার বাচা মিয়া মাঝি, আলশামস্ কমান্ডার আবু তাহের, ডেপুটি কমান্ডার আ ন ম মনির আহমদ মূল দলের সহযােগী হিসেবে কাজ করে।
২১শে অক্টোবর শান্তি কমিটির আনােয়ারা থানা শাখার কার্যকরী কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম নগরীর আছাদগঞ্জস্থ এডভােকেট ফজল করীমের বাসভবন ‘মােজাফফর খান বিল্ডিং’য়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করে থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ফজল করিম। সভায় ১০টি ইউনিয়ন কমিটির তালিকা নিরূপণ করা হয়। এছাড়া থানা শান্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী জোল্যার অধীনে পূর্বের নিয়ােগকৃত ২০০ জন রাজাকারের সঙ্গে আরাে ১৪৫ জন নতুন রাজাকার নিয়ােগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আনােয়ারার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিমিত্তে পাকবাহিনীর সঙ্গে সহযােগিতা করার জন্য রাজাকারদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়। থানা ও ইউনিয়ন শান্তি কমিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হয় তাদের একটি চূড়ান্ত তালিকা ঐ কমিটির সভায় পাশ করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ-এর নেতৃত্বে এ উপজেলায় আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠিত হয়। বিভিন্ন মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এই ছাত্র সংগঠনটি আলবদর ও আলশামস বাহিনীতে যােগ দেয় এবং পাকহানাদারদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিল মাদ্রাসা ছাত্র আবু তাহের (পড়ুয়াপাড়া) এবং ডেপুটি কমান্ডার ছিল আ ন ম মনির আহমদ (বারখাইন)। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৭০০ জনের মতাে, যার অধিকাংশই মাদ্রাসার ছাত্র।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ১৪ই এপ্রিল দক্ষিণ গহিরা গ্রামে বসবাসরত ৬টি হিন্দু পরিবারের সকল সদস্যকে ঘরে আবদ্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। এটি দক্ষিণ গহিরা গণহত্যা নামে পরিচিত। ২১শে এপ্রিল সকাল ১০টায় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা হিন্দু অধ্যুষিত খিলপাড়া গ্রামে হানা দিয়ে বহু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযােগ ও লুণ্ঠন চালায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭ জন গ্রামবাসীকে তারা গুলি করে হত্যা করে, যা খিলাপাড়া গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। একই দিন পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য আনােয়ারা, বােয়ালগাঁও, সিংহরা ও ধানপুরা গ্রামে হামলা করে অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। রাজাকারদের একটি দল এ সময় ধানপুরা
গ্রাম, ধানপুরা বাজার ও শােলকাটা গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত বাড়িঘরগুলাে জ্বালিয়ে দেয়। অপর একটি দল সিংহরা গ্রামে আক্রমণ করে গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এরপর পাকবাহিনী হিন্দু অধ্যুষিত আনােয়ারা গ্রামে প্রবেশ করে প্রতিটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ৯ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা শিলাইগড়া গ্রামে আক্রমণ করে গ্রামের ১০টির মতাে বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ৩০ জনের মতাে গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের ছেড়ে দেয়।
২০শে মে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে বন্দর গ্রামে হামলা করে ২১২ জন মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল চট্টগ্রাম শহরের, নিরাপদ ভেবে তারা এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। এটি বন্দর গণহত্যা নামে পরিচিত। ২১শে মে তারা পরৈকোড়া, বাথুয়াপাড়া ও পূর্ব কন্যারা গ্রামে গণহত্যা, অগ্নিসংযােগ ও লুণ্ঠন চালায়। পরৈকোড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খায়ের আহমদ চৌধুরী ওরফে খয়রাতি মিয়া [আনােয়ারা থানার পরৈকোড়া ইউনিয়নের ভিংরােল গ্রামে জন্ম। মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা ও থানা শান্তি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। দ্রষ্টব্য জামাল উদ্দিন, আনােয়ারা : একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ, চট্টগ্রাম, বলাকা ২০১০, পৃ. ২১৫, ২৩৫] তাকে ও তার সহযােগীদের সঙ্গে নিয়ে পাকবাহিনী ১৭৬ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে, যা পরৈকোড়া-বাথুয়াপাড়া-পূর্বকন্যারা গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। তারা এসব গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যাপক লুণ্ঠন চালায়। পাকসেনারা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন ছাত্রীকে একটি ঘরে আটক করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন খায়ের আহমদ চৌধুরী হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭ জন মানুষকে কালিমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে।
৭ই জুলাই শতাধিক পাকসেনাসহ তিন শতাধিক রাজাকার পশ্চিম আনােয়ারার হিন্দু অধ্যুষিত বটতলী, বারশত ও তুলাতলী গ্রামে হানা দিয়ে অগ্নিসংযােগ, লুণ্ঠন ও নারীনির্যাতন চালায়। এসব গ্রাম থেকে তারা গরু, ছাগল ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় এবং বেশকিছু যুবতী নারীকে ধর্ষণ করে। পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এসব গ্রাম থেকে দেড় শতাধিক মানুষকে ধরে এনে বারশত গ্রামের সুরমা পুকুরপাড়ে এনে জড়াে করে। তাদের মধ্যে ২৫ জনকে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়, যা সুরমা পুকুর গণহত্যা নামে পরিচিত। অন্যদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পর তাদের আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৪ঠা অক্টোবর আনােয়ারা গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে রাজাকার ও আলবদররা ৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এটি আনােয়ারা গণহত্যা নামে পরিচিত। ১৬ই নভেম্বর পাকিবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিশাল একটি দল পীরখাইন, তেকোটা, হাইলধর, পাঠনীকোটা, গুজরা ও শিলালিয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে বহু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযােগ ও নারীনির্যাতন করে। তারা ৪ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।
৯ই নভেম্বর সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে ২ শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা পশ্চিম আনােয়ারার ৮টি রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন। অপারেশন শেষে ফেরার পথে এক রাজাকার গােপন স্থান থেকে অতর্কিতে গুলি করলে মুক্তিযােদ্ধা রুস্তম আলী শহীদ হন। ভােররাতেই তাকে সহযােদ্ধারা বারশত সুরমা পুকুর পাড়ে সমাহিত করে ক্যাম্পে চলে যান। পরদিন সকালে এ খবর পেয়ে রাজাকার কমান্ডার জোল্যা ও বারশত ইউনয়ন শান্তি কমিটির নেতা আবদুল গণি চৌধুরী দলবল নিয়ে সুরমা পুকুর পাড়ে এসে কবর খুঁড়ে রুস্তমের লাশ তুলে গলায় রশি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে প্রায় ৩ মাইল দূরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেরিন একাডেমির ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ১৭ নভেম্বর সংঘটিত হয় পদ্মপাড়া গণহত্যা। এতে ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। দক্ষিণ গহিরা গণহত্যা সংঘটিত হয় ১৪ই এপ্রিল। এতে একই পরিবারের ৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
বন্দর গ্রামের মেরিন একাডেমিতে অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র। উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা এখানে অবস্থান করত। তাছাড়া রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য এখানে সার্বক্ষণিকভাবে থাকত। এখানে বহু মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করার পর লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এছাড়া গহিরায় অবস্থিত থানা রাজাকার কমান্ডার জোল্যার টর্চার সেল এবং ওসখাইন গ্রামে অবস্থিত রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিমের টর্চার সেলে বহু সাধারণ লােককে ধরে এনে নির্যাতন শেষে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। আনােয়ারা উপজেলার সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য বধ্যভূমি হলাে- বন্দর বদ্ধভূমি, যা মেরিন একাডেমি বধ্যভূমি নামেও পরিচিত।
আনােয়ারা উপজেলায় মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে অনেকগুলাে অপারেশন পরিচালনা করেন। ৩রা জুলাই রাতে গেরিলা মুক্তিযােদ্ধারা খাসখামা গ্রামের রাজাকার কমান্ডার নুরুল আবছারের বাড়ি আক্রমণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের আগমন টের পেয়ে নুরুল আবছার রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এ অপারেশনে নুরুল আবছারের ভাই রাজাকার ফজল হক নিহত হয়।
১১ই অগাস্ট ২০ জনের অধিক মুক্তিযােদ্ধা রাত তিনটায় বিলপুর গ্রামের রাজাকার ইউছুফ আলীর বাড়িতে আক্রমণ করেন। টের পেয়ে ইউছুফ আলী আত্মরক্ষার্থে মুক্তিযােদ্ধাদের লক্ষ্য করে বেড়ার ফাঁক দিয়ে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারে। এতে মুক্তিযােদ্ধা আবদুল মান্নান আহত হন। মুক্তিযােদ্ধারা গুলি চালালে ইউছুফ আলীর স্ত্রী নিহত হয়, ইউছুফ আলী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
৫ই সেপ্টেম্বর কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদী ও সুবেদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা ওসখাইন গ্রামস্থ রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিমের টর্চার সেল’ নামক বাড়িতে অপারেশন চালান। মুক্তিযােদ্ধারা যখন বাড়িটি ঘিরে ফেলেন, তখন আবদুল হাকিমের সহযােগী রাজাকার আলম শাহ মুক্তিযােদ্ধাদের লক্ষ করে গুলি চালায়। এতে চারজন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। মুক্তিযােদ্ধারা পাল্টা গুলি চালালে আবদুল হাকিম, তার এক আত্মীয় রাজাকার খুল্যা মিয়া, রাজাকার ভেট্টা বড়য়া এবং ফটিক বড়য়া নিহত হয়। এটি ওসখাইন অপারেশন নামে পরিচিত।
২৩শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা আনােয়ারা থানা অপারেশন করেন। এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন কমান্ডার সার্জেন্ট মহিউল আলম। তাঁর সহযােগী ছিলেন পটিয়ার আবদুস সবুর, আনােয়ারার মােহাম্মদ নাসিম, আবু ইসলাম, আইয়ুব ও এম এ মজিদ। এ অপারেশনে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে থানার ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং থানায় অবস্থানরত বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৬ জন সৈনিকসহ ৫৮ জন পুলিশ ও রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে বন্দি হয়। ১৩ই অক্টোবর একদল মুক্তিযােদ্ধা বিলপুর গ্রামের পাকবাহিনীর দোসর আবুল খায়ের সওদাগরকে ধরার জন্য তার বাড়ির নিকট ওঁৎ পেতে থাকেন। সন্ধ্যায় জয়কালী বাজার থেকে ফেরার পথে মুক্তিযােদ্ধারা তার ওপর আক্রমণ চালালে সে নিহত হয়। বিলপুর অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযােদ্ধা কবিয়াল এয়াকুব আলী। তাঁর সহযােগী ছিলেন ৮ জন মুক্তিযােদ্ধা।
৩রা নভেম্বর একদল গেরিলা মুক্তিযােদ্ধা সৈয়দ কুচিয়া গ্রামে অপারেশন চালান। এ অপারেশনে হিন্দু অধ্যুষিত আনােয়ারা গ্রামে জ্বালাও-পােড়াও ও লুটপাটে নেতৃত্বদানকারী রাজাকার মােতালেব নিহত হয়।
সার্জেন্ট মহিউল আলম রাজাকার অধ্যুষিত সমগ্র পশ্চিম আনােয়ারার পাঁচটি রাজাকার ক্যাম্পে একসঙ্গে অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর নেতৃত্বে ৯ই নভেম্বর রাত ১১টায় ৬ শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা পৃথক-পৃথক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকার ক্যাম্পগুলােতে আক্রমণ করেন। এ অপারেশনে ৬২ জনের মতাে রাজাকার নিহত হয় এবং তাদের অস্ত্রগুলাে মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে। পশ্চিম আনােয়ারা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন-এ মুক্তিযােদ্ধা রুস্তম আলী শহীদ হন।
১৭ই নভেম্বর বারখাইন গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন সার্জেন্ট মহিউল আলম। উভয় পক্ষের মধ্যে আধা ঘণ্টাব্যাপী প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে পাকবাহিনী পিছু হটে শহরের দিকে চলে যায়। বারখাইন যুদ্ধে ৪০ জনের মতাে গ্রামবাসী শহীদ হন।
২৯শে নভেম্বর বিকেলে কমান্ডার আবদুল লতিফ ও কমান্ডার কাজী মােহাম্মদ ইদ্রিমের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি বড় দল বটতলী বাজার (রুস্তমহাট) ঘেরাও করে রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালান। এ অপারেশনে ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। এটি বটতলী বাজার অপারেশন নামে পরিচিত।
৮ই ডিসেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা দ্বিতীয়বার আনােয়ারা থানা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। শাহজাহান ইসলামাবাদীর তত্ত্বাবধানে সার্জেন্ট হাবিবের নেতৃত্বে এ অপারেশন পরিচালিত হয়। পূর্বগুজরা গ্রামের চৈতন্য মহাজনের বাড়িস্থ মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্প থেকে ভাের ৬টায় আনােয়ারার সকল গ্রুপ এবং বরমা, বরকল ও কানাইমাদারি গ্রুপের তিন শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা এ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। এ অপারেশনে থানার ৪৫ জনের মতাে পুলিশ মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং মুক্তিযােদ্ধারা থানা থেকে ১০৬টি রাইফেল, ২টি এলএমজি ও বিপুল পরিমাণ গােলাবারুদ উদ্ধার করেন।
১৪ই ডিসেম্বর কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বাধীন বিশাল বাহিনী, আনােয়ারা থানার কমান্ডার কাজী ইদ্রিছ গ্রুপ, কমান্ডার আবদুর রাজ্জাক গ্রুপ ও কমান্ডার কাজী আবদুল হক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে সর্বশেষ অপারেশন পরিচালিত হয় মেরিন একাডেমির পাকহানাদার ক্যাম্পে। কেনাে রকম প্রতিরােধ ছাড়াই ঐদিন দুপুরে পাকবাহিনীর ২০ জন এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ৩০০ জন সদস্য মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই দিন পাকবাহিনীর দোসর ফজলুল কাদের চৌধুরী স্বপরিবারে বার্মা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের বহনকৃত গানবােটটি রাঙ্গাদিয়া চরে আটকে যায়। সাম্পান মাঝি ফেলু মিয়া ও নবী হােসেন মেরিন একাডেমিতে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে এ সংবাদ পৌছে দিলে মুক্তিযােদ্ধারা রাঙ্গাদিয়া চর থেকে তাদের আটক করেন। রাঙ্গাদিয়া চর অপারেশনে নেতৃত্ব দেন নুরুল ইসলাম আবু তাঁর সহযােগী ছিলেন। তাহের বাঙালি, আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল কাদের চৌধুরী ও মােহাম্মদ ইউসুফ। এদিনই আনােয়ারা থানা শত্রুমুক্ত হয়।
আনােয়ারা থানার শহীদ মুক্তিযােদ্ধারা হলেন- বশরুজ্জামান চৌধুরী (হাইলধর), হারুনুর রশিদ রুশ্নি (পীরখাইন), ইদ্রিছ। আনােয়ারী (বিলপুর), ইসমাইল আনােয়ারী (বিলপুর), রুস্তম আলী (পীরখাইন), আবদুল মজিদ (শােলকাটা), অনীল শীল (পাঠনীকোটা), অনিল বরণ দাশ (পীরখাইন), রাখাল রুদ্র (পাঠনীকোটা), শিবুপদ মল্লিক (পিতা নগেন্দ্র নাথ মল্লিক, সিংহরা), নেপাল চন্দ্র মল্লিক (পিতা ত্রিপুরা চরণ মল্লিক, সিংহরা), সুরেশ পাল (পিতা কৃষ্ণচন্দ্র পাল, হেটিখাইন), প্রতুল কান্তি পাল (পিতা কৃষ্ণচন্দ্র পাল, হেটিখাইন), আবদুল নবী (বরুমচড়া), উপেন্দ্র লাল চক্রবর্তী (পরৈকোড়া), আনসার কমান্ডার জালাল আহমদ (মালঘর), শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (শিলাইগড়া), আজিজুল হক (কৈনপরা), আহমদ সিরাজ (হাইলধর), মােহাম্মদ ইদ্রিছ চৌধুরী (জুইদন্ডি), জালাল হােসেন (চাতরী), সাধন দাশ (পাঠনীকোটা), অরুণ দাশ (গুজরা), আশুতােষ চক্রবর্তী (পাঠনীকোটা) এবং জালাল হােসেন (চাতরী, নায়েক ইপিআর, ঢাকা, নং-৫৫৭৭; ২৫শে মার্চ পিলখানায় শহীদ)। বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর গ্রামে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে একটি শহীদ স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। বারশত গ্রামে সুরমাপুকুর পাড়ে শহীদ রুস্তমের কবর পাকা করে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখা হয়েছে। রাজাকাররা তাঁর লাশ কবর থেকে তুলে যে সড়ক দিয়ে টেনেহিঁচড়ে পাকবাহিনীর মেরিন একাডেমির ক্যাম্পে নিয়ে যায়, দেশ স্বাধীন হবার পর মুক্তিযােদ্ধারা ঐ সড়কটির নামকরণ করেন শহীদ রুস্তম আলী সড়ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থায় ঐ সড়ক থেকে শহীদ রুস্তম আলীর নামের সাইনবাের্ড ফেলে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির নেতা ছিল আবদুল গণি চৌধুরী (আনােয়ারা থানার বারশত ইউনিয়নের গােবাদিয়া গ্রামে জন্ম। প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা, ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি ও থানা শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য। তার বাড়িতে ২০ জন রাজাকারের ক্যাম্প ছিল। থানা শান্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী জোল্যা (গহিরা) ছিল তার খুবই ঘনিষ্ঠ। দ্রষ্টব্য জামাল উদ্দিন, আনােয়ারা : একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ, বলাকা, চট্টগ্রাম, ২০১০, পৃ. ১৬১-৬২, ২১৫-২১৭, ২২৫। তার নেতৃত্বে শহীদ রুস্তমের লাশ কবর থেকে তুলে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শহীদ বশরুজ্জামান চৌধুরীর নামে বরুমছড়া গ্রামে একটি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দক্ষিণ বন্দরের সতীশ মহাজনের বাড়িতে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে শহীদ পরিবারের সদস্যরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। শহীদদের স্মরণে জয়কালী বাজারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ছিল, বর্তমানে সেটি বিলুপ্ত। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!