You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আনিসুল হক আকন্দ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আনিসুল হক আকন্দ

আনিসুল হক আকন্দ, বীর প্রতীক (১৯৫৩-২০০৮) দুঃসাহসী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা ও কোম্পানি কমান্ডার। তিনি ১৯৫৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার নান্দাইল থানার লংপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ আকন্দ ও মাতার নাম মুসলিমা খাতুন।
স্কুলজীবন থেকেই আনিসুল হক আকন্দ ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ-এর ৬ দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের তিনি সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৭১ সালে তিনি টাঙ্গাইল জেলার বাশহাটী হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের লােহার বনে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। এ সেক্টরে তাঁকে কোম্পানি কমান্ডার করা হয়। সিলেটের শমশেরনগর, বারমারী, ময়মনসিংহের ধানুয়া-কামালপুর, বকসীগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ শহর এবং ঢাকার মােহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। সহযােদ্ধাদের কাছে তিনি সঞ্জু নামে পরিচিত ছিলেন। ২রা নভেম্বর বর্তমান শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার ধানুয়াকামালপুর যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের শেলের আঘাতে তিনি আহত হন।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৪ঠা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী- কামালপুরের পাকিস্তানি ঘাঁটির সৈন্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য পাকসেনাদের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান সংবলিত চিঠি পাঠানাে হয়। বশির আহমেদ নামের একজন মুক্তিযােদ্ধা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ঐ দুরূহ কাজের দায়িত্ব নেন। কিন্তু পাকিস্তানি ক্যাম্পে যাওয়ার পর কিছু সময় অতিক্রান্ত হলেও তিনি ফিরে এলেন না। ফলে আরাে একজনকে চিঠি নিয়ে পাঠানাের সিদ্ধান্ত হয়। এবার দায়িত্ব নিলেন আনিসুল হক আকন্দ। এবারও সময় গড়িয়ে যায়। কেউ ফিরে এলেন না। মুক্তিযােদ্ধারা ধরে নিলেন দুজনকে হয় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছে, না হয় মাইন বিস্ফোরণে তারা শহীদ হয়েছেন। এমনি সময়ে আনিসুল হক আকন্দ দৌড়ে ফিরে এলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণে রাজি হওয়ার সংবাদ দিলেন। অপর মুক্তিযােদ্ধা পাকিস্তানি ক্যাম্পে রয়েছেন বলে জানান। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রথম কামালপুরে আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহসীকতাপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার আনিসুল হক আকন্দ-কে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে আনিসুল হক আকন্দ গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে মুন্ন টেক্সটাইল মিলসে নিরাপত্তা পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে নিয়ােজিত হন। তাঁর স্ত্রীর নাম সৈয়দা নূর নাহার। এ দম্পতি ৬ পুত্র এবং ৪ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। ২০০৮ সালের ১৫ই আগস্ট এ বীর মুক্তিযােদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। [রেহেনা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড