You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী

আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনীর অকুতােভয় যুদ্ধাহত মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ঢাকার মােহম্মদপুরে ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রমজান আলী শেখ ও মাতার নাম খায়রুন নেছা।
আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জ কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছেন। তিনি ছাত্রলীগ-এর রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলন ও আইয়ুববিরােধী ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর পক্ষে প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে নির্বাচনের রায় নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ তাঁকে ভীষণভাবে বিক্ষুব্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৭১-এর মার্চে পূর্ব বাংলার অসহযােগ আন্দোলন-এ তিনি ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এ বাঙালিদের উদ্দেশে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শােষণের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতির আহ্বান তাঁকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে। যুদ্ধের জন্য তিনি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যায় ঝাপিয়ে পড়লে আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয়ের তুরায় গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর দেশে ফিরে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীতে যােগ দেন এবং টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেসব যুদ্ধের মধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের পুলিশ স্টেশনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। আক্রমণ শুরুর দিন ছিল ৩০শে নভেম্বর। পাকসেনারা সেখানে মাটির নিচে বাঙ্কার বানিয়ে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করে। দেড়দিন ধরে এখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। বেশকিছু পাকসেনা ও রাজাকার যুদ্ধে হতাহত হয়। কিন্তু কোনাে অবস্থায়ই হানাদারদের হটানাে যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী পাকহানাদারদের বাঙ্কারের কাছাকাছি গিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এসময় তিনি শত্রুর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নির্দেশে মুক্তিযােদ্ধারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের উইথড্র করেন। এছাড়াও আনােয়ার হােসেন পাহাড়ী পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে মধুপুর, ভেংগুলা, ভূঞাপুর, সিংগুরিয়া, মির্জাপুর ও অন্যান্য স্থানে গেরিলা যুদ্ধ, এম্বুশ ও মুখােমুখি সংঘর্ষে বীরত্বের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ও বীরােচিত ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আনােয়ার হােসেন পাহাড়ীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম মমতাজ পাহাড়ী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!