You dont have javascript enabled! Please enable it!

‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত আনােয়ার পীরজাদা

আনােয়ার পীরজাদা (১৯৪৫-২০০৭) পাকিস্তানের কবি, সাংবাদিক ও বিমানবাহিনীর অফিসার। তিনি ১৯৪৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার ডােকরি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে ডােকরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার পর ১৯৬৫ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জর্জ এফ বেলসের সঙ্গে মহেঞ্জোদারাের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্নপূর্বক ১৯৬৯ সালে তিনি সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে পাইলট অফিসার হিসেবে যােগদান করেন।
দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে আনােয়ার পীরজাদা সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সিন্ধুর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখেছেন। তিনি ১৯৮১ সালে ডন পত্রিকায় লারকানার সংবাদদাতা হিসেবে যােগদান করেন এবং ১৯৮২ সালে শুকুরে দি স্টার পত্রিকার দপ্তর প্রধান নিযুক্ত হন। দি স্টার ও ডন পত্রিকায় সিন্ধুর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি দৈনিক সিন্ধ ট্রিবিউন ও নতুন প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দি রিজিওনাল টাইমস অব সিন্ধ (২০০৫) পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। দি নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, দি নেশন, দি ফ্রন্টিয়ার পােস্ট ইত্যাদি দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি পুস্তক রচনা করেন। তিনি ২০০৭ সালের ৭ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর পাইলট অফিসার ও সিন্ধি ভাষার কবি আনােয়ার পীরজাদা বাংলাদেশী জনগণের পক্ষে অবস্থান নেন। সত্তরের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে চিঠি লেখেন, যা গােয়েন্দা বিভাগের হস্তগত হয়। ঐ চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, পাকিস্তানিদের খাটি নেতা শেখ মুজিব। যেহেতু তিনি নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছেন, সেহেতু তাঁর নিকট শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত। না হলে পরিণতি ভালাে হবে না। এর ফলে সামরিক আদালতের বিচারে তাকে চাকরিচ্যুত ও সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। কারাভােগকালীন সময়ে তিনি ১৯৭১ সালের গণহত্যার কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ শিরােনামে একটি অসাধারণ কবিতা লেখেন। একজন পাকিস্তানি হয়ে সেদেশে থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনার তিনি দৃঢ় সমর্থক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২৪শে মার্চ ২০১৩ আনােয়ার পীরজাদা-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!