You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম আনােয়ার হােসেন

আনােয়ার হােসেন, বীর উত্তম (১৯৪৭-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গােপীনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল হামিদ ভূঁইয়া এবং মাতার নাম কুলসুমের নেছা। আনােয়ার হােসেন ১৯৬৪ সালে চণ্ডিদ্দার হাইস্কুলে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যােগদান করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সাইদা বেগম।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আনােয়ার হােসেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের অধীন রংপুর উইং-এ সিপাহি পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি তাঁর ইউনিটের বাঙালি সদস্যদের নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন প্রতিরােধ যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন।
বর্তমান লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাটি ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হবার কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য এ অঞ্চলটি ছিল খুবই নিরাপদ। পাটগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আবিদ আলী এমএলএ-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলার বুড়িমারীতে মুক্তিযােদ্ধারা শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করতে সমর্থ হন। বুড়িমারী স্থল বন্দর হবার কারণে কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের জন্য স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এপ্রিল মাস থেকেই এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী চেষ্টা চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬শে জুলাই তারা পাটগ্রামে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ হাতীবান্ধা থেকে এসে মুক্তিযােদ্ধাদের বুড়িমারী অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধারা এ আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ তীব্রতর হলে মুক্তিযােদ্ধা দলের এলএমজি ম্যান আনােয়ার হােসেন ক্রলিং করে শত্রুসৈন্যদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে থাকেন। এতে প্রায় ১৫২০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। তবে এ যুদ্ধে চরম মূল্য দিতে হয় আনােয়ার হােসেনকে; তিনি শত্রুর ছােড়া গুলিতে শহীদ হন। সহযােদ্ধারা তাঁকে পাটগ্রামে যথাযথ মর্যাদায় সমাহিত করেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ সিপাহি আনােয়ার হােসেনকে ‘বীর উত্তম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৫৫, খেতাবের সনদ নং ৪৮)। এছাড়াও এই বীর মুক্তিযােদ্ধার স্মৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য পিলখানা বিজিবি (পূর্বের বিডিআর) সদর দফতরের একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নামকরণ করা হয় ‘শহীদ আনােয়ার হােসেন প্যারেড গ্রাউন্ড’। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!