আদারভিটা গণহত্যা
আদারভিটা গণহত্যা (মাদারগঞ্জ, জামালপুর) ২৫শে অক্টোবর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে এদিন আদারভিটা গ্রামের ও এ গ্রামে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের অনেকে নিহত হন।
আদারভিটা গ্রাম নগর’ বা ‘দুধিয়াগাছা’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিশেষ করে জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বহু লােক পাকবাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শরণার্থীরা ঝড়কাটা নদী পার হয়ে নগর গ্রামে আশ্রয় নিতেন। এখানে শরণার্থীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, নগর গ্রামকে তখন দ্বিতীয় ইন্ডিয়া বলা হতাে। এ গ্রাম মুক্তিযােদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ করত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর-রাজাকাররা ২৫শে অক্টোবর ভােরে এ গ্রামে আক্রমণ করে। আদারভিটায় আক্রমণকারী পাকসেনারা তাদের জামালপুর ক্যাম্প থেকে প্রথমে ভাটারা (জাফরশাহী) স্টেশনে নামে। সেখান থেকে খুব সকালে ঝড়কাটা নদী পার হয়ে হরিপুরের কিছু আলবদর ও রাজাকারকে সঙ্গে নেয়। পাকসেনা ও রাজাকার-আলবদর মিলে ৬০-৭০ জন ছিল। তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। নগর গ্রামে একটি সমিতি ঘর ছিল।
সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মিলিত হতাে। পাকবাহিনী এ সমিতি ঘর ও গ্রামের শরণার্থী শিবিরে আক্রমণ করে। সমিতি ও শরণার্থী শিবিরের অনেকে তাদের গুলিতে নিহত হন। শরণার্থী শিবির ও সমিতি ঘরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর হানাদাররা মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার মােয়াজ্জেম হােসেন, মুক্তিযােদ্ধা জামিউল হক (পিতা খলিলুর রহমান), মােজাম্মেল হক (পিতা তৈজুদ্দিন), জীবন কৃষ্ণ সাহা (পিতা ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহা), ছাত্তার সরকার, আব্দুল হাই সরকার প্রমুখের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। সেদিন নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- নগর গ্রামের মহিউদ্দিনের তিন পুত্র আব্দুল গনি, আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল নূর হােসেন, মােছের আলী (পিতা রাজ মাহমুদ মুন্সী), ঘােতা শেখ ও গেদা মুন্সী (পিতা উদ্দিন মণ্ডল) আহত হন। আজিজুর রহমান ভােলা (পিতা রিয়াজ উদ্দিন সরকার), আবদুস সােবাহান (পিতা বছির শেখ)-সহ কয়েকজন। নিহত শরণার্থীরা দূর-দূরান্তের লােক হওয়ায় তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
যেসব রাজাকার পাকসেনাদের এ গ্রামে নিয়ে এসেছিল, তারা হলাে- ইসমাইল হােসেন (চেয়ারম্যান), তৈয়বর আলী বদর, শাহজাহান তালুকদার প্রমুখ। নিহত শরণার্থীদের আদারভিটা গণকবরে সমাহিত করা হয়। এখনাে এ গণকবর চিহ্নিত করা বা এখানে কোনাে স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়নি। [সৈয়দ মােহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড