বীর প্রতীক আতাহার আলী খান
আতাহার আলী খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪২) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার বারাই ভিকরা গ্রামে ১৯৪২ সালের ৯ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলাদত খান এবং মাতার নাম তােতা বেগম। আতাহার আলী খান বারাই ভিকরা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি এবং বায়রা হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
আতাহার আলী খান চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়ে ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ চাকরির জন্য আবেদন করেন। তিনি একজন ভালাে ক্রীড়াবিদ ছিলেন। চট্টগ্রামে ৮০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান লাভ করায় তাঁকে ইপিআর-এ নিয়ােগ দেয়া হয়। ১৯৬৩ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি তাতে যােগদান করেন। তিনি ঢাকার পিলখানা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারপর তাঁকে ৪ নম্বর সেক্টর দিনাজপুরে বদলি করা হয়। এখান থেকে ৯ নম্বর ব্যাটালিয়ন রংপুরে তিনি বদলি হন। ১৯৬৪ সালে ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর মটরগান, মেশিনগানসহ বিভিন্ন অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৭-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি কুড়িগ্রামের চিলমারিতে চাকরি করেন। ১৯৭১ সালে পাটগ্রামে থাকা অবস্থায় হাবিলদার হিসেবে আতাহার আলী খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আতাহার আলী ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। বুড়িমারিতে এ সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল। তিনি সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের অধীনে কমান্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজেস উদ্দিনের নেতৃত্বে বহু সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তিস্তা, পাটেশ্বরী, জয়মনিরহাট, রায়গঞ্জ, ভুরুঙ্গামারিসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আতাহার আলী খানকে বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৬৯, খেতাবের সনদ নম্বর ২১৯)। মুক্তিযুদ্ধের পর আতাহার আলী খান বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি মেজর হাবিলদার হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর জীবনে মানিকগঞ্জ জেলার বারাই ভিকরা গ্রামের বাড়িতে তিনি মুক্তিযােদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধার ভাতা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শিরিয়া বেগম (প্রয়াত)। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড