You dont have javascript enabled! Please enable it!

আড়ানি বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন

আড়ানি বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঘা, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ২২শে অক্টোবর। এতে ক্যাম্পের রাজাকার-রা পালিয়ে যায় এবং আড়ানি রেলসেতুটি বিধ্বস্ত হয়।
রাজশাহী জেলার বাঘা (মুক্তিযুদ্ধকালীন চারঘাট) উপজেলায় আড়ানি বাজার অবস্থিত। আড়ানি রেলসেতুর ১ কিলােমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং আড়ানি রেল স্টেশনের ১.৫০ কিলােমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই বাজারের অবস্থান। এখনকার ন্যায় মুক্তিযুদ্ধকালেও এখানে সপ্তাহে দুদিন হাট-বাজার বসত। হাটের দিনে হাটুরে এবং দোকানি মিলে প্রায় ৮-৯ হাজার লােকের সমাগম হতাে। রেলসেতুর দুদিকে বড়াল নদীর দুই পাড়ে এবং রেল স্টেশনে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপন করে হাটুরে লােকজন ও গ্রামবাসীর ওপর নির্মম অত্যাচার-নিপীড়ন চালাত। মুক্তিবাহিনী সন্দেহে যুবক ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের হত্যা এবং বাড়িঘর লুটপাটের মাধ্যমে সন্ত্রাস সৃষ্টি করত। এতে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়া এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়। ক্যাম্প নির্মাণের পাশাপাশি রাজাকাররা আড়ানি রেল ব্রিজ ও রেল স্টেশনের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারি ও টহলের ব্যবস্থা করে। তারা কারণে-অকারণে আড়ানি বাজারে গমন করে এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ও নিরাপত্তায় হুমকির সৃষ্টি করে। এ সংবাদ জানতে পেরে আজাদ আলীর (পরবর্তীতে বীর প্রতীক) নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ২১শে অক্টোবর রাতে কুষ্টিয়ার খাজুরারথাক বিওপি থেকে মুক্তিযােদ্ধারা নৌকাযােগে প্রমত্তা পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে আড়ানির নিকটবর্তী পাঁকা, বাঁকা, তেঁতুলিয়া ও পাকুড়িয়া গ্রামে আশ্রয় নেন। ২২শে অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে অপারেশন পরিচালনার লক্ষ্যে মুক্তিযােদ্ধারা আড়ানি বাজারের দক্ষিণে ফসলের মাঠে অবস্থান নেন। জুম্মার নামাজের আযান শুরু হলে তারা অতি সাবধানে অথচ ক্ষিপ্র গতিতে আড়ানি বাজারের ভেতর প্রবেশ করে রাইফেলের গুলিবর্ষণ করেন। প্রায় ১ কিলােমিটার দীর্ঘ আড়ানি বাজারের সমস্ত এলাকা থেকেই মুক্তিযােদ্ধারা একযােগে গুলিবর্ষণ করেন। এসময় মুক্তিযােদ্ধাদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ও রাইফেলের গুলির আওয়াজে আড়ানি বাজার প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। হাট ও আশেপাশে অবস্থানরত রাজাকাররা পালিয়ে যায়। বাজারে অবস্থানরত দুজন পাকিস্তানি পুলিশ মুক্তিযােদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা বিলম্ব না করে আড়ানি রেলসেতুর দিকে চলে যান। তাঁরা রেলসেতুটি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়ার পর আবার আড়ানি বাজারে ফিরে আসেন। এসময় রাজাকার বগা মিয়াকে মুক্তিযােদ্ধারা হত্যা করেন এবং দ্রুত আড়ানি বাজার ত্যাগ করেন। আড়ানি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনারা সারদা থেকে শেলিং শুরু করে। শেলিং মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের বাইরে নন্দনগাছির আশেপাশে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে আড়ানি বাজার অপারেশনটি আড়ানি রেলসেতু অপারেশনের প্রারম্ভিক কাজ ছিল। দিনের বেলায় এটি সংঘটিত হয়। অপারেশনে রাজাকাররা মুক্তিযােদ্ধাদের সামনে দাঁড়াতেই সক্ষম হয়নি। এ অপারেশনের মাধ্যমে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীদের সামনে মুক্তিযােদ্ধাদের সরব ও উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। এ অভিযানের পরদিন প্রতিশােধ হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনী বাসুদেবপুর গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। [মােস্তফা কামাল]।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!