আজিমাবাদ আনসার ক্লাব সংলগ্ন বধ্যভূমি (বােচাগঞ্জ, দিনাজপুর)
দিনাজপুর জেলার বােচাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লােককে হত্যা করা হয়।
বােচাগঞ্জের সেতাবগঞ্জ পৌরসভার চৌরাস্তা মােড় থেকে থানা রােড এলাকায় যাওয়ার পথে রাস্তার ডান দিকে আজিমাবাদ মহল্লায় আনসার ক্লাব অবস্থিত। ক্লাবের দক্ষিণ পাশে ১৫-২০ গজ দূরে পাকা রাস্তার পশ্চিমে এবং রেল লাইনের উত্তর দিকে একটি বড় পুকুর ছিল, যা পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনী বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। পুকুরটি বর্তমানে ভরাট করে সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আনসার ক্লাবটি পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতাে। ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানি সেনা মমতাজ খান। সে ছিল ভীষণ বাঙালি বিদ্বেষী ও হিংস্র প্রকৃতির। ক্লাবের টিনের ঘরগুলােয় অবস্থান নিয়ে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা হত্যাকাণ্ড চালায়। রাজাকাররা তাদের সহযােগিতা করত। এপ্রিল মাসের ১৯ তারিখ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেতাবগঞ্জে প্রবেশের সঙ্গে-সঙ্গে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। বীরগঞ্জের কাহারােল ও বােচাগঞ্জের সেতাগঞ্জের লােকজন। যারা বিভিন্ন রুট ধরে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করত, তাদের মধ্য থেকে শত-শত লােককে ধরে এনে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। তবে নিহতদের কারাে পরিচয় পাওয়া যায়নি, কারণ তাদের সবাই ছিল দূর-দূরান্তের লােক।
সেতাগঞ্জের থানা রােড দিয়ে বৈরচুনা সীমান্তে যাওয়া যেত। রণগাঁ ও মােল্লাপাড়া দিয়েও ভারত সীমান্তে যাওয়া যেত। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য মানুষ দল বেঁধে এসব রুট ধরে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু এসব রুটে রাজাকারদের প্রবল তৎপরতা ছিল। তারা আগ্নেয়াস্ত্রসহ পলায়নরত লােকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং অনেককে, বিশেষ করে যুবক ও পুরুষদের ধরে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিত আর তারা তাদের হত্যা করত। শরণার্থীদের মালামাল লুটপাট করত।
সেতাবগঞ্জে পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশের পর থেকে বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনী পলায়নরত শরণার্থীদের এবং দূর-দূরান্তের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে আনা লােকজনদের আনসার ক্লাবের পাশের পুকুরে হত্যা করে।
সেতাবগঞ্জের তৎকালীন সিও (ডেভলপমেন্ট)-এর কার্যালয় এবং বর্তমান উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পূর্ব-উত্তর পাশে বােচাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তার ধারে আরাে দুটি বধ্যভূমি ছিল। কিন্তু কোনাে বধ্যভূমিই সংরক্ষিত হয়নি। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড