You dont have javascript enabled! Please enable it!

আটগ্রাম যুদ্ধ

আটগ্রাম যুদ্ধ (জকিগঞ্জ, সিলেট) সংঘটিত হয় তিনবার – নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দুবার এবং এ মাসেরই ২০ তারিখ আরেকবার। সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার এ এলাকায় পাকসেনাদের একটি শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যুহ ছিল। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে নােমান আহমদের নেতৃত্বে ৬ জন মুক্তিযােদ্ধা আটগ্রাম পেট্রোবাংলা সড়কের রাজবাড়ির সামনে। এন্টিট্যাংক মাইন পুঁতে রাখেন। ঐ পথে পাকসেনাদের গাড়ি যাওয়ার সময় এই মাইন বিস্ফোরিত হলে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। এরপর পাকবাহিনী এলাকার নিরীহ মানুষদের ধরে নির্মম নির্যাতন শুরু করে।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আশরাফ আলীর নেতৃত্বে মােস্তাকিম হায়দর ৩০ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে ভারতের জালালপুর সাবসেক্টর থেকে এসে সুরমা নদী পার হয়ে আটগ্রাম ডাকবাংলােয় পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালান। পাকসেনারাও পাল্টা আক্রমণ করলে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। এসময় পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে কামান্ডার আশরাফ আলীর কোমরের পেছনের মাংস খুলে
পড়ে। সাহসী মুক্তিযােদ্ধা নােমান আহমদ তাঁকে কাঁধে করে জালালপুরে নিয়ে যান। এ-যুদ্ধে ল্যান্স নায়েক কামাল, মাে. আব্দুল গণি, মাে. আব্দুল খালেক, আফসান আহমদ ও আইয়ব আলী পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। এঁদের ৩ জনের কবর আটগ্রাম ডাকবাংলাের পাশে সংরক্ষিত আছে। এ ডাকবাংলােয় মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকবার যুদ্ধ হয়েছে। সেসব যুদ্ধে ৩০৩ রাইফেল, গ্রেনেড, এলএমজি, এসএলআর, এসএমজি এবং ২ ইঞ্চি মর্টার ব্যবহার করা হয়।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই ক্যাপ্টেন এ এ রবের নেতৃত্বে জালালপুর সাবসেক্টর থেকে লেফটেন্যান্টে জহির উদ্দিন প্রায় ১০০ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে আটগ্রামের গােটারগ্রামে আক্রমণ চালান এবং ২৪ ঘণ্টা এলাকা দখলে রাখেন। এরপর জকিগঞ্জ ও আটগ্রাম থেকে আগত পাকসেনাদের পাল্টা আক্রমণে তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এযুদ্ধে ২ জন পাকসেনা নিহত এবং গােটারগ্রাম এলাকার হাড়িকান্দি মাদ্রাসার ৩ জন রাজাকার- বন্দি হয়।
২০শে নভেম্বর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী জকিগঞ্জের লােহারমহল, আমলশীদ ও আটগ্রাম এলাকায় নদী পার হয়ে তুমুল যুদ্ধ শুরু করে। যৌথবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে আটগ্রামস্থ পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে আক্রমণ করলে মূল যুদ্ধ শুরু হয়। সর্বশেষ এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন আলাপীনসহ প্রায় একশ সৈন্য নিহত হয় এবং মিত্রবাহিনীর গাের্খা রেজিমেন্টের মেজর জুরীসহ অনেক সৈন্য শহীদ হন। অবশিষ্ট পাকসেনা ও রাজাকাররা শাহবাগ ও কানাইঘাটের দিকে পালিয়ে যায়। ফলে ২১শে নভেম্বর আটগ্রাম এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। [আল হাছিব তাপাদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!