You dont have javascript enabled! Please enable it!

আটঘর-কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান যুদ্ধ

আটঘর-কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান যুদ্ধ (স্বরূপকাঠি, পিরােজপুর) এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে কয়েকবার সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ, ক্যাপ্টেন বুলু, কুড়িয়ানা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিবর বিশ্বাস, বানারীপাড়ার কমান্ডার বেনীলাল দাশগুপ্ত, কাউখালির হাবিব কমান্ডার ও আব্দুল হাই পনার নেতৃতে এখানকার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এছাড়া পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদার আলাদাভাবে দল গঠন করে এ যুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।
১৫ই মার্চ থেকে কুড়িয়ানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশাল শহর দখল করে নিলে ২৭শে এপ্রিল ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ ও এ এম জি কবীর ভুলু ৩৫ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে চলে যান। এ-সময় নিরাপদ স্থান হিসেবে মুক্তিযােদ্ধারা গভীর পেয়ারা বাগানে অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বরিশাল-ঝালকাঠীর ভীত-সন্ত্রস্ত বহু মানুষ আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেয়। অপরদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১১ই মে স্বরূপকাঠি উপজেলা দখল করে ক্যাম্প স্থাপন। করে। এরপর রাজাকারদের সহায়তায় তারা পেয়ারা বাগানে অভিযান শুরু করে। এসময় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি খণ্ড যুদ্ধ হয়।
সিরাজ সিকদার আলাদাভাবে দল গঠন করে পূর্ব ব্রাহ্মণকাঠিতে পাকিস্তানি সৈন্যদের স্পিডবােটের ওপর হামলা চালান। হামলায় স্পিডবােট ডুবে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। স্পিডবােটের মেশিন উদ্ধার করে তার বাহিনী নিয়ে যায়। সিরাজ সিকদারের সঙ্গে এখানে আরাে যুদ্ধ করেন সেলিম শাহনেওয়াজ, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, ফজলুল হক, মহিউদ্দিন, নুরুদ্দিন, বাদল, এনায়েত, কালাম, আসাদ, মাছুম, মুজিব প্রমুখ। এসময় জুয়েল আইচের ছদ্মনাম ছিলাে জাহিদ। কুড়িয়ানা সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিবর বিশ্বাস তাঁর দল নিয়ে ব্যাপকভাবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। এ দলের সদস্য শিশির কণা মল্লিক (পূর্ব ব্রাক্ষণকাঠি), বীথিকা বিশ্বাস (বাস্তুকাঠি), কনক প্রভা (জিন্দাকাঠি) এ ৩ জন মহিলা মুক্তিযােদ্ধা বাউকাঠিতে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এদিন ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ, ক্যাপ্টেন বুলু, পরিমল ঘােষ, শচীন কর্মকারও উপস্থিত ছিলেন। ২ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। একদিন মুক্তিযােদ্ধারা সংবাদ পান, পুলিশ নরেরকাঠি রায়ের বাজার লুট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ এম জি কবীর ভুলুর নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা সঙ্গে-সঙ্গে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনদিক থেকে আক্রমণ করে হানাদারদের মুক্তিযােদ্ধারা পরাস্ত করেন। এ-যুদ্ধে সাফল্যের জন্য ক্যাপ্টেন বেগ এ এম জি কবীর ভুলুকে ‘লেফটেন্যান্ট’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
এরপর বানারীপাড়ায় পাকিস্তানি সৈন্যদের আগমনের খবর পেয়ে ভিক্ষুকের বেশে ঝুলিতে ৪টি গ্রেনেড নিয়ে মুক্তিযােদ্ধা। পরিমল ঘােষ ও সেন্টু বানারীপাড়া যান। তারা ফিরে আসার পর এ এম জি কবীর ভুলুর নেতৃত্বে পরিমল ঘােষসহ ৬ জন মুক্তিযােদ্ধা বানারীপাড়া থানা আক্রমণ করেন। তাঁরা থানা থেকে কয়েকটি রাইফেল ছিনিয়ে নেন। এসব সংবাদ দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং হানাদার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে পেয়ারা বাগানে অভিযান চালানাের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বাগানের ওপর দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হেলিকপ্টার ঘুরপাক খায়। তাদের ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে মুক্তিযােদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। মুক্তিযােদ্ধারা চলে গেলে হানাদাররা চারদিক থেকে পেয়ারা বাগান আক্রমণ করে। এরপর থেকে বিরতিহীনভাবে চলে অগ্নিসংযােগ, হত্যা ও ধর্ষণ। [হাবিবুল্লাহ রাসেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!