আগ্রাবাদ বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমার অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
পরিচালিত হয় ৫ই আগস্ট। চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় পরিচালিত এ অপারেশনের পরিকল্পনার সঙ্গে ডা. মাহফুজুর রহমান সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। অপারেশন বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ও তরুণ মুক্তিযােদ্ধা রইসুল হক বাহার এতে আরাে অংশ নেন। ফয়েজুর রহমান ও গরীব উল্লাহ নামে দুজন মুক্তিযােদ্ধা অপারেশনের পূর্বে ফয়েজুর রহমান, গরীব উল্লাহ ও রইসুল হক বাহার ভিন্ন-ভিন্ন দিন স্থানটি রেকি করেন। অপারেশনের দিন পাকিস্তান শিপিং কোম্পানির অফিসে পাকিস্তান নৌবাহিনী, শিপিং কোম্পানি ও জাপানের একটি প্রতিনিধি দলের মধ্যে নৌ-বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল চুক্তি স্বাক্ষরের এ আয়ােজন ভন্ডুল করা এবং চট্টগ্রামের পরিবেশ যে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং বিদেশীদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রতিকূল তা প্রমাণ করা। জুতার প্যাকেটে বিস্ফোরক ভর্তি করে মােঘলটুলির কালু সওদাগরের টেক্সিতে তুলে ৫ই আগস্ট সকালে মুক্তিযােদ্ধারা অপারেশনে বেরিয়ে পড়েন। সকাল ৯:৩০টায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পাকিস্তানি সেনাসদস্য ও পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ পাকিস্তান শিপিং কোম্পানির অফিস সংলগ্ন বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে প্রবেশ করেন। স্টেশনের ভেতরে পাহারারত একজন পাকসেনাকে বাথরুমে আটকে রেখে এবং অন্য একজন বাঙালি কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁরা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। পরে দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানাে হয়। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে বিদ্যুৎ স্টেশনের ট্রান্সফর্মার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী সব ভবনের কাচ ভেঙ্গে যায়। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ অপারেশনের ফলে জাপানিদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সভা বাতিল হয়ে যায়। তারাসহ অন্য বিদেশীরা ভয়ে পাকিস্তান, বিশেষত চট্টগ্রাম ত্যাগ করতে থাকে। পাকিস্তান সামরিক জান্তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অকুতােভয় মুক্তিযােদ্ধাদের কৌশল ও সাহসের কাছে অকার্যকর, সে বিষয়টি পুনর্বার প্রমাণিত হয়। [সাখাওয়াত হােসেন মজনু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড