আজমিরীগঞ্জ থানা অপারেশন (আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)
পরিচালিত হয় ২৫শে জুন। এতে হানাদাররা পালিয়ে যায় এবং মুক্তিযােদ্ধারা বিজয় অর্জন করেন।
আজমিরীগঞ্জ হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) সীমান্তবর্তী এলাকা। এর থানা সদরের পাশ দিয়ে কুশিয়ারা নদী প্রবাহিত। এখানে একটি লঞ্চ ঘাট রয়েছে। সড়ক পথে এ থানাটি বানিয়াচঙ্গ থানা হয়ে হবিগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। স্থানটি একটি নদীবন্দর এবং এ থানার সঙ্গে নদীপথে পার্শ্ববর্তী বানিয়াচঙ্গ থানা ও সুনামগঞ্জ মহকুমার যােগাযােগ থাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হতাে। তাই তারা সর্বদা জলপথের দিকে দৃষ্টি রাখত।
৫ই মে পাকবাহিনী আজমিরীগঞ্জ থানায় এসে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। থানার নিকটবর্তী সিরাজ মিয়া নামক জনৈক ব্যক্তি ছিল পাকবাহিনীর দোসর। তার সহযােগিতায় তার বাড়িতেই তারা রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প থেকে তারা নদীপথে চলাচলকারী নৌযান তল্লাশিসহ জনসাধারণের ওপর নানারকম অত্যাচার ও লুটপাট চালাত। তাদের এই অপকর্মের কারণে মুক্তিযােদ্ধারা যে কোনাে সময় হামলা করতে পারেন এমন ভয়ে তারা সদা তটস্থ থাকত। এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এখানে কার্ফ্যু দিয়ে রাখত। এই প্রেক্ষাপটে ৩নং সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধারা তাদের শায়েস্তা করার জন্য আজমিরীগঞ্জ থানা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
আক্রমণের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মুক্তিযােদ্ধা সালেহ চৌধুরীকে। সালেহ চৌধুরী স্থানীয় শিক্ষক মুক্তিযােদ্ধা আশরাফ মাস্টার ও কৃষি বিশেষজ্ঞ ব্রজেন্দ্র চৌধুরীর সহযােগিতায় একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মােতাবেক ২৫শে জুন হাটবার সালেহ চৌধুরী ৩০ জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে থানা আক্রমণের জন্য অগ্রসর হন। জনমানবহীন শুইয়ারগাঁও নামক স্থানে গিয়ে তিনি তার বাহিনীকে প্রয়ােজনীয় দিকনির্দেশানাসহ ঝটিকা আক্রমণের নির্দেশ দেন। সে মােতাবেক বড় ব্যবসায়ী নৌকায় মুক্তিযােদ্ধারা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে বিকেল ৪টায় কার্ফ্যু জারির পূর্বে দুর্ধর্ষ আক্রমণ রচনা করেন। তখন থানা ও দালাল সিরাজের বাড়িতে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল। সংখ্যায় তারা অনেক বেশি হলেও এই আকস্মিক আক্রমণে জ্ঞানশূন্য হয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধারা সহজে বিজয় লাভ করেন। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড