বীর প্রতীক আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান, বীর প্রতীক (১৯২৯-১৯৯০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালে পাবনা জেলার সুজানগর থানার বনকোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম আব্দুল আলী মােল্যা এবং মাতার নাম জাগিরন নেসা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বনকোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি মালিপা হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তারপর ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) বাহিনীতে যােগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া থানার গােয়ালগঞ্জ বিওপিতে। ১৯৭১ সালে তিনি হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তিনি ভজনপুরের গােয়ালগঞ্জ প্রতিরােধ যুদ্ধ, তেতুলিয়া থানা দখল, মাঝিপাড়া ক্যাম্প দখল, রওশনপুর ক্যাম্প মুক্তকরণ এবং ভূতিপুকুর, সুকানী, ভজনপুর ক্যাম্প, মাগুরমারী বিওপি, অমরখানা বিওপি ও পঞ্চগড় দখল যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরাে নয়মাস নিজ কমান্ড এলাকা শত্রুমুক্ত রাখতে তিনি সফল হন। স্থানীয় জনগণ তাঁর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ গােয়ালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ‘আজিজনগর’ নাম দেয়। এ নাম বর্তমানেও অপরিবর্তিত আছে।
আজিজুর রহমান অমরখানা ব্রিজ এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ভারতে তাঁকে চিকিৎসা দেয়া হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৫১, খেতাবের সনদ নং ২০১)। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যােগ দেন এবং ১৯৮৬ সালে নায়েক সুবেদার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি তিন কন্যা ও পাঁচ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লুফা বেগম। ১৯৯০ সালের ১৪ই অক্টোবর তার মৃত্যু হয়। [জালাল আহমেদ]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড