আগলা-গালিমপুর যুদ্ধ (লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ)
সংঘটিত হয় ২৪শে সেপ্টেম্বর। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন জাফর খানসহ ৭০ জনের অধিক পাকসেনা হতাহত হয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নওয়াবগঞ্জ থানার গেরিলাযােদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি লঞ্চ আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। এল এম পয়েন্টার নামে লঞ্চটি গালিমপুর এলে মুক্তিযােদ্ধারা তার ওপর আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। লঞ্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন জাফর খানসহ শতাধিক সৈন্য ছিল। পরদিন দুপুর পর্যন্ত দুপক্ষে গুলি বিনিময় হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লঞ্চটিকে সরিয়ে অবতরণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণের ফলে তারা সফল হতে পারেনি। মুক্তিযােদ্ধারা পাকসেনা বহনকারী লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। এ লঞ্চ ডােবানাে ছিল তাঁদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাতে মুক্তিযােদ্ধারা সফল হন এবং তাদের বিজয় হয়। সিরাজদিখানের কেয়াইনের সাহসী মুক্তিযােদ্ধা আবদুস ছাত্তার এক্সপ্লোসিভ নিয়ে পানিতে সাঁতার দেন। তিনি লঞ্চটির পেছন দিকে এক্সপ্লোসিভ ফিট করে বিস্ফোরণ ঘটান। এতে লঞ্চটি সম্পূর্ণ আগুনে জ্বলে যায়। সাঁতার কেটে ফিরে আসার সময় মুক্তিযােদ্ধা সাত্তার হাতে গুলিবিদ্ধ হন। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন জাফর খানসহ ৭০ জনের অধিক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। এ খবর পেয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের আরেকটি লঞ্চ ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়। এবারও পাকসেনারা পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধরা বেশকিছু অস্ত্র দখল করেন। এর প্রতিশােধ নেয়ার জন্য দুদিন পর আরাে একটি পাকসেনা দল বড়খাল ও আড়িয়াল বিল দিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও গেরিলাযােদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ করে হানাদারদের ব্যর্থ করে দেন। এভাবে তিনবার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ করার চেষ্ঠা করে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। প্রতিবারেই মুক্তিযােদ্ধারা বিজয় লাভ করেন। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন কমান্ডার ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) ওমর আলী। এতে অংশগ্রহণ করে কমান্ডার আঙ্গুরের ইউনিট, বাড়ৈখালীর কমান্ডার হুমায়ুন, নাসির খানের ইউনিট, কাজীর পাগলার সােলায়মানের ইউনিট, কোলাপাড়ার আতিকউল্লাহ খান মাসুদের ইউনিট, লৌহজং-এর ঢালী মােয়াজ্জেমের ইউনিট এবং ভাগ্যকুলের আবদুস শহীদের ইউনিট। [জগন্নাথ বড়য়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড