আগ্রাবাদ ফায়ার ব্রিগেড অফিস অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
পরিচালিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বহু মুক্তিযােদ্ধা চট্টগ্রাম শহরে এসে অবস্থান নেন। তাঁদের হাতে তখন প্রচুর ভারী অস্ত্রশস্ত্র। ৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযােদ্ধারা অপারেশনের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। তাঁদের এ মনােভাব লক্ষ করে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের হাইকমান্ড আগ্রাবাদে হানাদারদের ফায়ার ব্রিগেডের আঞ্চলিক সদর দপ্তরে বিস্ফোরণ ঘটানাের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা এও ধরে নেন যে, ফায়ার ব্রিগেড অফিসটা আগ্রাবাদের প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় সেটিতে যখন বিস্ফোরণ ঘটবে, তখন একই সড়ক ধরে দুদিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যবাহী কনভয় ছুটে আসবে। সেই সুযােগে রাস্তার পশ্চিম পাশে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযােদ্ধারা অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালাবে। এটি ছিল একটি কম্বাইন্ড অপারেশন। চট্টগ্রামের সব কমান্ডারসহ ৪০ জন মুক্তিযােদ্ধা এ অপারেশনে অংশ নেন। বিস্ফোরণের দায়িত্ব দেয়া হয় অমল মিত্র, ফজলুল হক ভূঁইয়া, ফয়েজুর রহমান ও রাউজানের জাফরকে। তাদের পরিকল্পনা ছিল, বিস্ফোরণ ঘটার পর যখন বিভিন্ন দিক থেকে পাকিস্তানি সেনারা আসবে, তখন তাদের এম্বুশে ফেলবে রাস্তার পশ্চিম পাশে এলএমজি, এসএমজি, এসএলআর, থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও গ্রেনেডসহ পজিশনরত হারুন গ্রুপ ও লােকমান গ্রুপের কিছু সদস্য। অমল মিত্রসহ ৪ জন মুক্তিযােদ্ধা অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরঞ্জামসহ রাস্তা অতিক্রম করে ফায়ার ব্রিগেড অফিসে ঢােকেন এবং সেখানকার সকল স্টাফকে নিরাপদ দূরত্বে পাঠিয়ে দেন। মুক্তিযােদ্ধারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে দুটি রুমে মেশিনের মধ্যে এক্সপ্লোসিভ সেট করেন। ডেটোনেটিং কর্ড ও ডেটোনেটর সংযুক্ত করার পর ফিউজে কর্ড ফিট করে অগ্নিসংযােগ করেন। এক মিনিটের মধ্যে তারা রাস্তার পশ্চিম পাশে চলে যান। দেড় মিনিটের মাথায় বিকট শব্দে এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরিত হয়। এম্বুশের স্থানে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দখলদার বাহিনী সেখানে না আসায় মুক্তিযােদ্ধারা এম্বুশ উইথড্র করে তাঁদের শেল্টারে চলে যান। এ অপারেশনে আরাে অংশ নেন আজিজ, মফিজ, গরীবুল্লাহ, জাহেদ, মুসলিম খানসহ কেসি ১,২,৩,৪ ও এফ এফ-এর বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরা। [জামাল উদ্দিন]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড