বীর প্রতীক আক্তার আহমেদ
আক্তার আহমেদ, বীর প্রতীক (১৯৪৫) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ২৭শে আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলার চণ্ডীতলা থানার বড়তাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুস সুলতান মল্লিক এবং মাতার নাম মনিরুন নেসা বেগম। তিনি ১৯৬২ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাস স্ট্রিটে অবস্থিত মডার্ন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য, আক্তার আহমেদের পিতা পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে চাকরি করতেন এবং ঐ সময় কলকাতায় পাকিস্তান হাই কমিশনে তার পােস্টিং ছিল। তাই আক্তার অহমেদকে পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর-এ ক্যাপ্টেন হিসেবে যােগদান করেন। তাঁর পােস্টিং হয় কুমিল্লা সেনানিবাসের ৪০ ফিল্ড এম্বুলেন্স ইউনিটে।
১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সামরিক সরকার সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার কথা মাথায় রেখে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আক্তার আহমেদ ঐ ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তাদের ইউনিটের অবস্থান ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২৫শে মার্চ এবং তার পরবর্তী সময়ে ঢাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র পাকবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালি হত্যার খবর শুনে তিনিসহ তার ইউনিটের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। ২৭শে মার্চ তাঁরা শাফায়েত জামিল, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এখালেদ মােশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ২নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হন। নিয়মিত বাহিনীর অফিসার সংখ্যা বেশি না থাকায় খালেদ মােশাররফ তাঁকেও একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠান। আক্তার আহমেদ একজন বীর যােদ্ধা হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
পরবর্তীতে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ২নং সেক্টরের যুদ্ধাহত মুক্তিযােদ্ধাদের চিকিৎসার প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করে আক্তার আহমেদকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে এনে একটি হাসপাতাল স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়। আক্তার আহমেদ আগরতলার মতিনগরে অবস্থিত ২নং সেক্টরের সদর দফতরের নিকট সােনামুড়া নামক স্থানে স্থাপন করেন বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল। এ হাসপাতালে তিনি আরাে কয়েকজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযােদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন। পরবর্তীতে ব্রিগেড আকারে ‘কে’ ফোর্স গঠন করা হলে তিনি ঐ ফোর্সের এডজুট্যান্ট আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও বাংলাদেশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার আক্তার আহমেদকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ২৬২, খেতাবের সনদ নং ১২)। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি তার কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর, কুমিল্লায় যােগদান করেন এবং ১৯৭৪ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে লিবিয়া চলে যান এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন। তারপর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিক্যাল সুপারভিশন টিমের স্থানীয় পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সৈয়দা ওবায়দুল নাহার। উল্লেখ্য যে, তাঁর ছােট ভাই মঞ্জুর আহমেদ, বীর প্রতীক। একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধা। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড