আঁন্দ্রে আঁন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো
আঁন্দ্রে আঁন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো (১৯০৯-১৯৮৯) সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা, দীর্ঘকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত।
আঁন্দ্রে আঁন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো ১৯০৯ সালের ১৮ই জুলাই সাবেক সােভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান বেলারুশ) গমেল এলাকার স্টারিয়া গ্র্যামিকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি গমেলের ভােকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বরিসভের একটি টেকনিক্যাল স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩১ সালে তিনি সােভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। পরবর্তীকালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি সােভিয়েত একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর গবেষক ও প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি সােভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যােগদান করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত (১৯৪৩-৪৬), জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যে সােভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত (১৯৫২), ১৯৫৭-৮৫ সাল পর্যন্ত সােভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১৯৮৫-৮৮ সাল পর্যন্ত দ্য প্রেসিডিয়াম অব দ্য সুপ্রিম সােভিয়েত-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাফল্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা তাঁকে ‘বিশ্ব কূটনীতির ডিন হিসেবে পরিচিত করে তােলে। তিনি ২ বার ‘হিরাে অব সােশ্যালিস্ট লেবার’, ৭ বার ‘অর্ডারস অব লেনিন’, ‘অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার’, ‘অর্ডার অব ব্যাজ অব অনার পুরস্কারসহ আরাে অনেক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ২রা জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁন্দ্রে আঁন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো শুরুর দিকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের পক্ষে কূটনীতিক ফ্রন্টে দূরদর্শী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত সুসংগঠিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ আঁন্দ্রে আঁন্দ্রেভিচ গ্রোমিকো-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড