You dont have javascript enabled! Please enable it! ‘জেড’ ফোর্সের ব্রিগেড মেজর অলি আহমদ (বীর বিক্রম) - সংগ্রামের নোটবুক

অলি আহমদ, বীর বিক্রম

অলি আহমদ, বীর বিক্রম (জন্ম ১৯৩৯) ক্যাপ্টেন, পরবর্তীতে কর্নেল, বীর মুক্তিযােদ্ধা ও ‘জেড’ ফোর্সের ব্রিগেড মেজর। তিনি ১৯৩৯ সালের ১৩ই মার্চ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আমানত ছফা এবং মাতার নাম বদরুন্নেছা। তিনি ১৯৫৭ সালে চান্দনাইশের গাছবাড়িয়া এন জি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পাকিস্তানের করাচি শহরের ন্যাশনাল কলেজ থেকে তিনি ১৯৬৪ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন বিষয়ে অধ্যয়নকালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যােগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৭ সালে তাঁকে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিযুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৭০ সালে তাঁকে ৮ম ইস্ট বেঙ্গলে বদলি করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রামের ষােলশহরে নবগঠিত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার ছিলেন। ৭১-এর মার্চ মাসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গােপন তৎপরতা, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মার্চ মাসব্যাপী অসহযােগ আন্দোলন, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ ও দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকট ইত্যাদি সম্বন্ধে তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। চট্টগ্রামের ইউনিট লাইনে অবস্থানরত অন্যান্য বাঙালি সামরিক অফিসারদের যখন চট্টগ্রাম নৌবন্দরে পাকিস্তান থেকে আনা সােয়াত যুদ্ধ জাহাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নামানাের জন্য প্রেরণ করা হয়, তখন তিনি তাঁদের অনেককে সতর্ক করে দেন এবং অনেকেই ফিরে আসেন। তিনি বুঝতে পারেন, বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করে এরপর তাদের হত্যা করার একটি গােপন পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা অগ্রসর হচ্ছে। এমতাবস্থায় ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালিদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে তারা বিদ্রোহ ঘােষণা করে পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসার জানজুয়াকে গ্রেপ্তার করেন। কিছু পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে হত্যার পর তাঁরা মেজর জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ভাের ৬টায় কর্ণফুলী নদীর অপর তীরে কালুরঘাট ব্রিজে অবস্থান নেন। ২৭শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র পাঠ করেন। পরের দিন মেজর জিয়া তাঁর রেজিমেন্টের একদল বাঙালি সেনাদের নিয়ে কক্সবাজার চলে যান। ৩১শে মার্চ স্বল্প সময়ের জন্য কক্সবাজার থেকে কালুরঘাটে এসে ক্যাপ্টেন (তখনকার তাঁর র্যাংক) অলিসহ মেজর জিয়া তাঁর সেনাসদস্যদের নিয়ে ফটিকছড়ি হয়ে রামগড়ে চলে যান। ক্যাপ্টেন অলি সার্বক্ষণিক মেজর জিয়ার সঙ্গেই ছিলেন। সেখানে ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ক্যাপ্টেন অলি জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম-এর সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় চলে যান।
জুন মাসে ‘জেড’ ফোর্স গঠিত হওয়ার পর ক্যাপ্টেন অলিকে এর প্রথম ব্রিগেড মেজর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ব্রিগেড মেজর হিসেবে তিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গল, ৩য় ইস্ট বেঙ্গল ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের গঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধাকালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য কালুরঘাট এবং অন্যান্য যেসব স্থানে যুদ্ধ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন, সেসবের মধ্যে মিরেশ্বরাই, মাস্তাননগর, হিঙ্গুলি, করেরহাট, টোলাতলি, হেয়াকু, চিকনছড়া, রামগড় ও চান্দগাজী (বিলুনিয়া)-র যুদ্ধ উল্লেখযােগ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ক্যাপ্টেন অলি আহমদকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে অলি আহমদ মেজর পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯শ ইস্ট বেঙ্গল, ৯ম ইস্ট বেঙ্গল, ১০ম ইস্টবেঙ্গল ও ৬ষ্ঠ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি লে. পদে উন্নীত হন। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। একই বছর তিনি সামরিক বাহিনীর চাকরি থেকে পদত্যাগ করে সক্রিয় রাজনীতিতে যােগ দেন। জেনারেল জিয়ার খুবই ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হিসেবে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এ যােগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর কর্নেল অলি আহমদ একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী/মন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১-৯৬ সময়ে বেগম জিয়ার বিএনপি সরকারের যােগাযােগ মন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি লিবারেল ডেমােক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড