You dont have javascript enabled! Please enable it! অভয়া ব্রিজ অপারেশন, রাজশাহী - সংগ্রামের নোটবুক

অভয়া ব্রিজ অপারেশন

অভয়া ব্রিজ অপারেশন (গােদাগাড়ি, রাজশাহী) পরিচালিত হয় ২৬শে আগস্ট। এতে ১ জন মুক্তিযােদ্ধা শহীদ এবং ২ জন আহত হন অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ২০-২৫ জন নিহত হয়।মুক্তিযুদ্ধে ৭নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ৪নং লালগােলা সাবসেক্টরের কমান্ডার মেজর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী অভয়া ব্রিজ অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। এ অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিজটি বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযােগীদের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যকার যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এ পথে টহল দিত। পাশাপাশি তারা রাজাকার ও অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে অভয়া ব্রিজে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল। এ ব্যবস্থার কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের নিরাপদ চলাচল ও অপারেশন পরিচালনা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিল। অভয়া ব্রিজটি বিস্ফোরকের সাহায্যে ধ্বংস করতে অপারেশন পরিচালনায় দুই প্লাটুন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ােজিত হন। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে রাজশাহী থেকে ৪৫ কিলােমিটার দূরে অভয়া নামক স্থানে ব্রিজটি অবস্থিত। ব্রিজের অদূরেই পদ্মা নদী।
২৬শে আগস্ট রাত ৮টার দিকে মুক্তিযােদ্ধারা অভয়া ব্রিজ অপারেশন পরিচালনার জন্য পদ্মা নদীর মুক্তাঞ্চল সীমান্ত চৌকি থেকে ৩টি বড় নৌকাযােগে রওনা হন। বর্ষার পানিতে খাল-বিল-নদী-নালা ও পথ-ঘাট সবই ছিল পানিতে নিমজ্জিত। ব্রিজের অদূরে অবস্থিত প্রমত্তা পদ্মা নদীও পানিতে কানায়-কানায় পূর্ণ ছিল। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কে অভয়া ব্রিজের নিকটবর্তী রাস্তার কোনাে-কোনাে স্থানে দুই ফুটেরও অধিক পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে মুক্তিযােদ্ধাবাহী নৌকাগুলাে এক সময় রাতের অন্ধকারে গােদাগাড়ির উপকূলে পৌছায়। কিন্তু মাঝিরা রাতের অন্ধকারে নৌকা কোথায় ভেড়াবে তা স্থির করতে পারছিল না। এক পর্যায়ে নৌকাগুলােকে অভয়া ব্রিজ থেকে আধা কিলােমিটার পশ্চিমে সরিয়ে এনে পানিতে নিমজ্জিত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের একটি নির্দিষ্ট স্থানে থামানাে হয়। চাপইনবাবগঞ্জের দিক থেকে পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের সহযােগীরা এ পথে এলে তাদের প্রতিরােধ করার জন্য এখানে কিছু সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধা অবস্থান গ্রহণ করেন। অপর মুক্তিযােদ্ধারা অভয়া ব্রিজের দিকে অগ্রসর হন। এ-সময় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ব্রিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে অবস্থান করছিল। তারা মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান টের পায়। এ অবস্থায় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সম্মিলিত বাহিনী ব্রিজের দিকে অগ্রসরমাণ মুক্তিযােদ্ধাদের লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করে। সারারাত ধরে দুপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান ছিল তুলনামূলকভাবে উঁচু এলাকায়। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। তাই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানাের লক্ষ্যে মুক্তিযােদ্ধারা অপারেশন সফল না করেই পশ্চাদপসরণ করেন। এ-সময় ইপিআর বাহিনীর হাবিলদার মুক্তিযােদ্ধা তৌহিদুল ইসলাম শহীদ হন এবং অন্য ২ জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ২০-২৫ জন নিহত হয়। তাদের ২টি নৌকাও মুক্তিযােদ্ধারা ডুবিয়ে দেন। যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য অভয়া ব্রিজ ধ্বংস করতে না পারলেও পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হন। [মােস্তফা কামাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড