শরণার্থী শিবিরের মানুষের কাছে ‘জগৎ মা’ বলে পরিচিত অঞ্জলি লাহিড়ী
অঞ্জলি লাহিড়ী (১৯২২-২০১৩) ভারতের সমাজসেবী। তিনি ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম সুবর্ণ প্রভা দাস। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি মায়ের কর্মস্থল শিলংয়ে ৫ম শ্রেণি এবং ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পূর্ব বাংলার বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এখান থেকেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি কলকাতার ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং শিলংয়ের সেন্ট মেরীজ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৪১ সালে তিনি সিলেটে এসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগ দিয়ে সিলেটের গ্রামে-গঞ্জে সংগঠনের কাজে লিপ্ত হন এবং পুরােদমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ভারত বিভাগের পর তিনি বিএ পাস করেন। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর অঞ্জলি লাহিড়ী আসাম গার্লস স্টুডেন্ট এসােসিয়েশনের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন সময় কারাবরণ করেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে সমাজসেবায় আত্মনিয়ােগ করেন এবং খাসিয়া পাহাড়ে দরিদ্র জনগােষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন সমাজসেবামূলক কাজ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি মুক্তিযােদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ত্রাণসামগ্রী ক্রয়পূর্বক সীমান্তে স্থাপিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবির-এ গিয়ে এসব বিতরণ করতেন। তিনি চেরাপুঞ্জীর শেলা নদীর পাড়ের শরণার্থী শিবিরে নিয়মিত ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন। শরণার্থী শিবিরের মানুষের কাছে তিনি ‘জগৎ মা’ বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দলবল নিয়ে তিনি মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তিবাহিনীর শিবিরে খাদ্য বিতরণ এবং চিকিৎসা প্রদান করেন। ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অঞ্জলি লাহিড়ী-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড