‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত অনিল ভট্টাচার্য
অনিল ভট্টাচার্য (জন্ম ১৯৩০) ভারতের সাংবাদিক। তিনি ১৯৩০ সালের ১৭ই অক্টোবর পূর্ব বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আর কে ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম সুহাসিনী ভট্টাচার্য। ১৯৪৫ সালে তারা আগরতলায় গমন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি কলকাতার হার্ভার্ড কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি কংগ্রেসের ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য ছিলেন এবং পরে কংগ্রেসের সদস্য হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে অনিল ভট্টাচার্য যুগান্তর ও অমৃতবাজার পত্রিকার আগরতলার সংবাদদাতা ছিলেন। এমএলএ হােস্টেলের কাছে অবস্থিত তার বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসই বাংলাদেশ থেকে আগত বহু মানুষ এসে আশ্রয় নিতেন। তাঁর বাড়িটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের নিয়মিত মতবিনিময়ের কেন্দ্র। তিনি তাঁর পত্রিকায় শরণার্থীদের দুঃখকষ্টের বর্ণনা ছাড়াও মুক্তিবাহিনীর বীরত্বের খবর গুরুত্ব সহকারে ছাপাতেন। তিনি সাপ্তাহিক সমাচার পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। এ পত্রিকায় খবরের পাশাপাশি প্রায় প্রতিনিয়ত তিনি সম্পাদকীয় লিখেছেন, যার অধিকাংই ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিবাহিনীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যােগাযােগ রাখতেন এবং তাদের সহযােগিতা দান করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রের তথ্য ও মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্যগাথা সমাচার, যুগান্তর, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশ করার পাশাপাশি তিনি বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বের তথ্য উপস্থাপন করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত ছাপাখানা ‘ইমপ্রেস’-কে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাণ্ডে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার অনিল ভট্টাচার্য-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করে। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড