রাজধানী মুজিবনগর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় আগমন
ঢাকা : ২২শে ডিসেম্বর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ দীর্ঘ ৯ মাস পর বাংলাদেশ সরকারের সকল দপ্তরসহ ঢাকায় আগমন করেন। নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করলে মুক্তিপাগল জনগণ আনন্দ উল্লাসে বিহ্বল হয়ে পড়ে। ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে ঢাকার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ফুলের পাপড়িতে ভরে উঠে তেজগাঁ বিমান বন্দর। এরপর মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর বীর জোয়ানরা নেতৃবৃন্দকে গার্ড অব অনার দিয়ে সম্বর্ধনা জানান। উৎসবমুখর জনতার সম্মুখে সংক্ষিপ্ত ভাষণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি। এই কৃতিত্বের দাবীদার আমরা নই। বাংলার সাড়ে ৭ কোটি জনতার সুদৃঢ় ঐক্য আর আত্মত্যাগ, এ-সাফল্য এনে দিয়েছে বাংলার বীর মুক্তিবাহিনী। অস্ত্র ধরে প্রমাণ করে দিয়েছে পৃথিবরি কোন শক্তি স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে দমন করতে পারে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। তিনি বাংলার জনগণকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা আর আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব ভারত সরকারের। ভারত ও বাংলাদেশ দু’টো সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র। শত্রুদের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার দ্বারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। তিনি বলেন, কুপমণ্ডুকতার পরিবর্তে গতিশীলতা, কুসংস্কারের পরিবর্তে নতুন ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের বিপ্লব অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী :
প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ তেজগাঁ বিমান বন্দরে সমবেত লক্ষাধিক জনতার উদ্দেশ্যে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, বাংলার জনগণ রক্ত আর আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যে স্বাধীনতা লাভ করলো, তা টিকে থাকবেই থাকবে। লাখো লাখো শহীদের রক্তে যে বাংলার মাটি উর্বর হয়েছে সে মাটির ফসল বাংলার গরীব, চাষী, তাঁতী ও সাধারণ মানুষ ভোগ করবে; তাতে পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, উপনিবেশবাদীদের হাত বাড়াতে দেয়া হবে না। আমাদের বিপ্লব শেষ হয়নি, নিরন্ন মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য সাম্যবাদী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব চলতে থাকবে।
বাংলাদেশ ॥ ১ : ৯ ॥ ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন