ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত
গত ২২শে ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও তাঁহার মন্ত্রিসভার অপরাপর সদস্যদের ঢাকা আগমনের মধ্য দিয়া স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের রাজধানী মুজিবনগর হইতে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
বাঙলাদেশ সরকারের নেতৃবর্গ ঢাকায় পৌছিলে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সমবেত লক্ষাধিক জনতা তাঁহাদের প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানায়। নয় মাস দখলদার পাক বাহিনীর পদানত থাকার পর সদ্যমুক্ত ঢাকার সংগ্রামী জনতা এই দিন যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মত ভাঙিয়া পড়ে।
বিকাল চারটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে নেতৃবৃন্দকে বহনকারী একটি বিশেষ হেলিকপ্টার তেজগাঁও বিমান বন্দরের মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে জনতার লক্ষ কণ্ঠে শ্লোগান ওঠে—জয় বাঙলা, মুক্তিবাহিনী-মিত্রবাহনী জিন্দাবাদ, শেখ মুজিবকে মুক্ত কর, বাঙলাদেশ-ভারত মৈত্রী জিন্দাবাদ, বাঙলাদেশ-সোভিয়েত মৈত্রী জিন্দাবাদ, মহান সোভিয়েত দেশ জিন্দাবাদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক।
অন্যান্যদের মধ্যে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মণি সিং, ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, ন্যাপ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বিমানবন্দরে বাঙলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা জানান।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী নেতৃবর্গকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর বাঙলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে (পূর্বতন গভর্নর হাউস) অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হইবে বাঙলা এবং উহা সরকারী অফিস, আদালত সহ সর্বস্তরে চালু হইবে। স্টেট ব্যাঙ্কের নাম হইবে বাঙলাদেশ ব্যাঙ্ক।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য ঢাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হইবে। শহীদদের পরিবারবর্গের সাহায্যের জন্য তহবিল খোলা হইবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অবিলম্বে পুনর্নির্মিত হইবে এবং এই জন্য কমিটি নিযুক্ত হইবে৷
জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরো, পাকিস্তান কাউন্সিল ও প্রেস ট্রাস্ট বিলুপ্ত হইবে। ইহার জন্য প্রয়োজনীয় আর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হইতেছে।
২৫শে মার্চের পরে গৃহীত সকল পরীক্ষাদি বাতিল বলিয়া ঘোষিত হইল এবং তদস্থলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শীঘ্রই পরীক্ষা গৃহীত হইবে যাহাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা পরীক্ষা দিতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১ : ২৫ ॥ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন