স্বীকৃতি নাই বা হোক, বাঙলাদেশ স্বপ্রতিষ্ঠিত হবে —প্রধানমন্ত্রী
(বিশেষ প্রতিনিধি)
মুজিবনগর, ২৪শে সেপ্টেম্বর— ‘স্বীকৃতি চাইনা, স্বীকৃতি ছাড়াই বাংলাদেশের মানুষ তাদের মাতৃভূমি থেকে হানাদার বাহিনীকে নির্মূল করে দিয়ে সপ্রতিষ্ঠিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।’ সম্প্রতি মুজিনগরে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান মন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহমেদ উপরি উক্ত মন্তব্য করেন।
একথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী বলেন ১৯১৭ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন স্বাধীনতা লাভ করলেও দীর্ঘ দিন সে স্বীকৃতি পায়নি, ১৯৪৯ সালের পহেলা অক্টোবর গণচীন স্বাধীনতা লাভ করলেও আজ পর্যন্ত বিশ্ব রাষ্ট্রসংঘে তার কোন স্বীকৃতি মেলেনি।
কিন্তু তথাপি তারা আছে এবং বিশ্বের মানচিত্রে খুব ভাল ভাবেই আছে।
প্রধান মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার স্বীকৃতি নাইবা হোক তবুও আত্মশক্তির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর মানচিত্রে সে স্থায়ী আসন লাভ করবেই।
যুদ্ধের কাল যতই বাড়বে মীরজাফরের সংখ্যা ততই কমে
জনাব তাজুউদ্দীন আহম্মদ বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ যতবেশী দিন ধরে চলবে, মুক্তিবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের ইয়াহিয়ার পা-চাটা কুকুররা ততই খতম হবে।
বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করবে
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ভারত, যুগোশ্লাভিয়া প্রভৃতি দেশের ন্যায় জোট নিরপেক্ষ নীতি পালন করবে বলে প্রধান মন্ত্রী উল্লেখ করবে। আমাদের প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান মন্ত্রী বলেন সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-রুশ, শান্তি ও মৈত্রী চুক্তিকে তিনি কোনক্রমে সামরিক চুক্তি বলে মেনে নিতে পারেন না এবং এই চুক্তির ফলে ভারত যে জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাও তিনি বিশ্বাস করেন না। এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দান করে প্রধান মন্ত্রী বলেন, অন্যায় আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা কখনই সামরিক চুক্তি হতে পারে না। দ্বিতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করেন তারাই যে একজোট ভুক্ত একথা বলারও কোন যৌক্তিকতা নেই।
দুর্ভিক্ষ
বাংলাদেশে বর্তমানে যে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান মন্ত্রী বলেন, কোন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় জনজীবনে স্বভাবতই বিশৃঙ্খলা, অভাব-অনটন, এবং জ্বালা-যন্ত্রণা এসে যায়। তা বলে আমাদের হতোদ্যম হলে চলবে না। সাহস এবং সততার সঙ্গে সমস্ত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের মুক্ত অঞ্চলে খাদ্য, বস্ত্র, ও ঔষধ জনসাধারণের ত্রাণকার্য্যে পাঠানো হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
স্বাধীনতা, স্বাধীনতা!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ জওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রধানমন্ত্রী তা সহাস্যে উড়িয়ে দিয়ে বলেন আমাদের এখন এক দফা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা। এ ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক সমাধানই আরা কোন ক্রমে মেনে নিতে রাজী নাই।
বাঃ সুন্দর তো!
‘বাঃ সুন্দর তো।’ আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি সাপ্তাহিক বাংলা’র একটি সৌজন্য সংখ্যা প্রদান করলে উক্ত পত্রিকা সম্পর্থে প্রধান মন্ত্রী একই সঙ্গে আনন্দ ও বিস্ময়ে উপরি উক্ত মন্তব্য করেন।
প্রধান মন্ত্রী বলেন যে, ‘সাপ্তাহিক বাংলা’ স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত সাড়ে সাতকোটি বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের বিশেষ সহায়ক হোক এই কামনা করি।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১ : ২ ॥ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন