বাঙালি জাতিকে দাবাইয়া রাখার সাধ্য কাহারও নাই—
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ইয়াহিয়ার আপোষ প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান
রাজনৈতিক ভাষ্যকার
“এই বাংলা বীর প্রসবিনী বাংলা সংগ্রামী বাংলা। চিরদিন কাহারও কলোনী হইয়া, বাজার হইয়া, গোলাম হইয়া রাখিতে পারিবে না। বাঙালি জাতির জয় হইবেই।” স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের এই প্রত্যয় দৃপ্ত ঘোষণাই সগর্ব উল্লাসে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত করিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্ধ-বর্ষ পূর্তির এই শুভলগ্নে আকাশে বাতাসে বজ্র নির্ঘোষে গজিয়া ফিরিতেছে নিরপেক্ষ নিয়তির কণ্ঠনিঃসৃত ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’: “সাবাস, বাংলাদেশ, অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। ছয় মাসের যুদ্ধে পঁচিশ হাজার হানাদার শত্রু সৈন্যকে খতম করার মাধ্যমে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য অনুসারীরা দেখাইয়া দিয়াছেন বাঙালি জাতিকে দাবাইয়া রাখার সাধ্য কাহারও নাই। তাহারা দেখাইয়া দিয়াছেন, শুধু ব্যালেটরই নয় বাঙালির বুলেটের জোরও কত বেশী। আর এবার বুলেটের জোরে আপন বাহুবলে মাতৃভূমির বুক হইতে হানাদার দুশমনকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করিয়া জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার মহান লক্ষ্যে অবিচল থাকিয়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নর ঘাতক ইয়াহিয়ার আপোষ প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করিয়া দিয়াছেন।
মানবেতিহাসের ঘৃণ্যতম নরঘাতক দস্যু ইয়াহিয়া স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুমহান উদ্দেশ্যে পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে শক্তির জোরে বানচাল করিয়া দেওয়ার উদ্ভট প্রচেষ্টায় মাতিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু বীর প্রসবিনী বাংলার দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পাল্টা আঘাত পররাজ্য লোভী সেই শক্তিমত্ত নর-পশুর তোগলকি খেয়ালের শাদ্দাদী বালাখান ভাঙ্গিয়া-চুরয়িা ধুলিস্মাৎ করিয়া দিয়াছে। … হানাদার বাহিনীর সঙ্গে অমিতবিক্রমে বুঝাপড়া করিয়া বাংগালীজাতি বিশ্ববাসীকে এই ধ্রুব সত্যের জ্বলন্ত সূর্যের সামনে প্রয়োগের দ্বারা বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা যাইবে না।
বাংলার বাণী ॥ ৫ সংখ্যা ॥ ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন