You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণ

গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি সংগ্রামী বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বেতার ভাষণে বলেন, গণ- প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও আটক সকল গণ-প্রতিনিধিদের অবিলম্বে মুক্তিদান, বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদারবাহিনী ফিরিয়ে নেয়া, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শোষকশ্রেণী কর্তৃক এ যাবৎ বাংলাদেশ থেকে অপহৃত ধনসম্পদ ও গত আড়াই মাসের লড়াইয়ে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের যে ক্ষতি সাধন করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তা নির্ণয় করে লুণ্ঠিত ধন প্রত্যার্পন ও পূর্ণ ক্ষতিপূরণের দ্বারাই কেবল রাজনৈতিক সমাধান আসতে পারে অন্যথা রাজনৈতিক সমাধানের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।
তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রাজনৈতিক সমাধান বা আপোষ মীমাংসা সম্পর্কে যে জল্পনাকল্পনা চলছে সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ কোন গোঁজামিলের সমাধান গ্রহণ করবে না।
আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে সকল বাঙালী হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান এক সাথে লড়েছেন, বুকের তপ্ত লহু ঢেলে দিয়ে বাংলার মাটি সিক্ত করে তারা এটাই প্ৰমাণ করেছেন এদেশের প্রতিটি প্রাণ ঐক্যবদ্ধ, অভিন্ন।
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সীমিত সামর্থের জন্য আমাদের প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন রণাঙ্গনে আপনারা যে অসীম অটল মনোবলের পরিচয় দিচ্ছেন, তার জন্যে আজ সারা বাঙালি জাতি গর্বিত। দেশমাতৃকার বীর সন্তান আপনারা। এ সংগ্রামে যে সব সাথী শহীদ হয়েছেন যারা পঙ্গু হয়েছেন তাঁদের পরিবারবর্গের রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব আমার সরকার ইতিপূর্বেই গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

স্বদেশ ॥ ১ : ২ ॥ ১ জুলাই ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!