শীঘ্রই হানাদার বাহিনীকে খতম করে
বাঙলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে শত্রু কবল মুক্ত করে শরনার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনবো
-প্রধানমন্ত্রী
(বিশেষ প্রতিনিধি)
মুজিবনগর ৭ই জুলাই :
মুজিব নগরে বাঙলা দেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ ও সংসদ সদস্যদের এক যুক্ত বৈঠক গত ৫ ও ৬ই জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে বাঙলা দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বিষদ ভাবে আলোচনা করা হয়। আলোচনা কালে স্বাধীন সার্বভৌম গণ প্রজাতান্ত্রিক বাঙলা দেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজ উদ্দীন আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন শীঘ্রই হানাদার বাহিনীর উপর প্রচন্ড আঘাত হেনে বাঙলাদেশকে সম্পুর্ণ ভাবে শত্রু কবল মুক্ত করা হবে।
এই বৈঠকে প্রায় – ৪০০ শতেরও অধিক-সংসদ সদস্য যোগাদান করেন। এই বৈঠকে নিৰ্ব্বাচিত সংসদ সদস্য ও মুক্তি বাহিনী প্রধান সদস্য ও মুক্তি বাহিনী প্রধান জেনারেল উসমানী হানাদার বাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমণের জন্য প্রস্তুত মুক্তি ফৌজের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেন— একটি সশস্ত্র সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের বাঙলা মুক্তি বাহিনীর কমান্ডোরা যে ত্যাগ এবং তিতিক্ষা সহ্য করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নতুন নজীর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মহোদয়দের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন আর সে দিন দূরে নয়-যেদিন আমাদের মুক্তি বাহিনী বীর বেশে জয়ের মাল্য পরে বাঙলা দেশের মাটিতে পদার্পন করবে। তিনি আরও বলেন— এ পর্যন্ত সে সমস্ত রণাঙ্গনে আমাদের মুক্তি ফৌজেরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হানাদার খান সেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে-সেই সমস্ত রণাঙ্গন থেকে খান সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তিনি দৃষ্টান্ত স্বরূপ আরেকটি মুক্ত অঞ্চলের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন পূর্বে এই সমস্ত এলাকা হানাদার বাহিনীর কবলে ছিল কিন্তু আমাদের — কমান্ডোদের প্রচন্ড আক্রমণে খান সেনারা পয্যুদস্ত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে’- আর স্বীকৃত হয়েছে মুক্ত অঞ্চল হিসাবে।
এই বৈঠকে বিভিন্ন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মহোদয়রা যত শীঘ্র সম্ভব মুক্তি ফৌজকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বাঙলা দেশকে সম্পূর্ণ শত্রু কবল মুক্ত করে ভারতে বিতাড়িত শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মত প্রকাশ করেন। তাঁরা আরোও বলেন শরনার্থীদের ফিরে আসার পর তাদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ও মালামাল যাতে তারা ফিরে পায় তারও নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।
জনাব তাজ উদ্দীন আহমেদ নানা প্রকার অত্যাচার ও নির্মম পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে ও বাঙলা দেশের জনসাধারণ বাঙলা দেশ সরকারের প্রতি যে আস্থা স্থাপন করে আছেন সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন আপনারা ভুলে যাবেন না যে বাঙলা দেশের স্বাদীনতার ব্যাপারে আপনারা ও এক একজন মুক্তি সৈনিক সে পথ থেকে বিচ্যুত হলে দেশআপনাদের ক্ষমা করবে না। তাই সৰ্ব্বদা নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করে কাজ করে যান জয় আমাদের নিশ্চিত। এ জয়ের পথে কোন শক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা স্তব্ধ করতে পারে নাই এবং পারবে না ইতিহাসের সাক্ষ্য এ প্রমাণই বহন করে।
সোনার বাংলা (২) ॥ ১ : ৩ ॥ জুলাই ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন